সিগন্যালিং ও ডাটা কমিউনিকেশন
(সিগন্যালিং ও ডাটা কমিউনিকেশন) কম্পিউটার কমুনিকেশনে ফিজিক্যাল মিডিয়ার মধ্য দিয়ে ডাটা প্রবাহিত হয় ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল হিসেবে। এই ইলেকট্রিক সিগন্যালের মাধ্যমে একটি কম্পিউটার অন্যান্য ডিভাইস, যেমন প্রিন্টারের সাথে সংযােগ গড়ে ও প্রিন্টারে প্রিন্ট পাঠায়। ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল বিভিন্ন সাের্স থেকে বিভিন্নভাবে আসতে পারে, তবে এর মধ্যকার তথ্য একই হতে পারে। এ অধ্যায়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের সিগন্যালিং, সিগন্যাল পরিমাপের উপায়, এনালগ ও ডিজিটাল সিগন্যালের পার্থক্য, ডিজিটাল সিগন্যালকে এনালগ ও এনালগ সিগন্যালকে ডিজিটাল পরিবর্তন, নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশনে ব্যবহৃত বিভিন্ন সিগন্যাল, ইত্যাদি সম্পর্কে জানব।
সিগন্যাল কী?
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল বলতে বোঝানো হয় সময়ের সাথে ভােল্টেজের পরিবর্তনকে। যখন ভোল্টেজ শূন্য থাকে এবং সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে চূড়ায় উঠে তখন কিছু পরিবর্তন হয়, এবং ভােল্টেজ কমার সাথে সাথে এটি নিচের দিকে নামতে থাকে। সময়ের সাথে ভােল্টেজের এই উঠানামাই হলাে হলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের কোনাে মিডিয়ায় যখন ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল প্রবাহিত হয় তখন আসলে ভোল্টেজের ওঠানামা ঘটে থাকে। কোনাে সিগন্যাল হারিয়ে গেলে দুটি কম্পিউটারের মধ্যে কম্যুনিকেশনে বিঘ্ন ঘটে। আমরা যখন ফোনে আলাপ করি তখন যদি কোনাে সিগন্যাল হারিয়ে যায় তাহলে কথার মাঝে কিছু শুনতে পাই না। এই সিগন্যাল যদি দু’এক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ থাকে তাহলে আমরা হারানাে কথাকে বুঝতে পারি। কিন্তু কম্পিউটার কমুনিকেশনের ক্ষেত্রে এরকম ছােটখাটো সিগন্যাল হারিয়ে যাওয়া অনেক অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে।
নেটওয়ার্ক ডিজাইন, ইনস্টল ও ট্রাবলশুটিং এর জন্য সিগন্যালিং বোঝা দরকার। নেটওয়ার্ক এক কম্পিউটার থেকে সিগন্যাল আরেক কম্পিউটারে পরিবাহিত হয় মূলত ক্যাবলের মধ্য দিয়ে। এর সাথে থাকে নেটওয়ার্ক এডাপটার, হাব, ব্রিজ, ইত্যাদি ডিভাইস। এসব ডিভাইস ইলেকট্রিক সিগন্যালকে পরিবাহিত করে। এসব ইলেকক্যাল সিগন্যাল ডাটার রূপ নেয় (OSI মডেলের উপরের স্তরের দিকে পৌছে। এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারের সিগন্যাল ঠিকমতাে ট্রান্সমিট না হলে তাদের মধ্যে সফল কম্যুনিকেশন হতে পারে না। সিগন্যাল কেন পরিবাহিত হচ্ছে না কিংবা হলেও ডাটা কেন যাচ্ছে না তার সমাধান চাইলে বিভিন্ন সিগন্যালিং ও সেগুলির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সজাগ থাকা দরকার।(সিগন্যালিং ও ডাটা কমিউনিকেশন)
সিগন্যাল মাপার উপায়
নেটওয়ার্ক সিগন্যাল ট্রান্সমিট হয় আসলে ভোল্টেজের ওঠানামা মাধ্যমে। এই উঠানামার ধাঁচকে বলা হয় ওয়েভফরম। দু’ধরনের ওয়েভফরম দেখা যায়: সাইন ওয়েভ (sinewave) ও স্কয়ার ওয়েভ (Square wave). উভয় ধরনের ওয়েভ ফর্মেই ভোল্টেজের ওঠানামা আছে। একটা ওয়েবের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন পয়েন্টের দূরত্বকে বলা হয় এমপ্লিচ্যুড (amplitude)। এই এমপ্লিচ্যুড যত বেশি হবে সেই সিগন্যাল তত শক্তিশালী হবে। এই ‘ক্তকে মাপা হয় অ্যাম্পিয়ার (ampere) হিসেবে। আর প্রতি সেকেন্ডে কোনো সিগন্যাল যতগুলি ওয়েভ তৈরি করে তা হলাে ফ্রিকোয়েন্সি। এই ফ্রিকোয়েন্সি কি মাপা হয় হার্জ (Hertz) হিসেবে।
সিগন্যাল ও কম্পিউটার
কম্পিউটার কেনার সময় আপনার কনফিগারেশন কীভাবে সেট করেন? প্রসেসরের সময় নিশ্চয় চান পেন্টিয়াম থ্রি, ৫৫০ মেগা হার্টজ। ৫৫০ মেগা হার্টজ মানে হলাে প্রসেসর প্রতি সেকেন্ডে ৫৫০ মিলিয়ন হার্টজ বা সাইকল সম্পন্ন হতে পারে। এটি দিয়েই আমরা বুঝতে পারি একটি প্রসেসর কী পরিমাণ কাজ করতে পারে। বিভিন্ন কমুনিকেশনের জন্য কম্পিউটার সিগন্যাল ব্যবহার করে থাকে। দু’ধরনের সিগন্যাল এতে ব্যবহৃত হতে পারে: এনালগ সিগন্যাল ও ডিজিটাল সিগন্যাল।
এনালগ সিগন্যাল
এনালগ সিগন্যাল আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে থাকি। আমরা যখন কথা বলি তখন সেটি এনালগ সিগন্যাল হিসেবেই পরিবাহিত হয়। এনালগ সিগন্যালে সাইন ওয়েভ তৈরি হয় যাতে থাকে এমপ্লিচ্যুড ও ফ্রিকোয়েন্সি। ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালও এনালগ হতে পারে। এনালগ সিগন্যালকে আমরা তুলনা করতে পারি এনালগ ঘড়ির সাথে। এনালগ ঘড়িতে একটি কাঁটা যখন ঘুরছে তখন প্রতি মুহূর্তে এর অবস্থান পরিবর্তিত হচ্ছে। এনালগ সিগন্যালেও তেমনি প্রতি মুহুর্তে ওয়েভের অবস্থান পরিবর্তিত হয়। (সিগন্যালিং ও ডাটা কমিউনিকেশন) এনালগ সিগন্যালের আরেকটি উদাহরণ হতে পারে রেডিও সিগন্যাল। AM ও FM রেডিও সিগন্যাল আসলে এনালগ সিগন্যাল। কোনাে সিগন্যালের ফ্রিকোয়েন্সি ২০ বা তার কম হলে আমরা সেটি শুনতে পাই। রেডিও সিগন্যাল এর চেয়ে অনেক বেশি ফ্রিকোয়েন্সির হওয়ার কারণে আমরা তা শুনতে পাই না। AM বা Amplitude Modulation রেডিও সিগন্যালের ফ্রিকোয়েন্সি হয়ে থাকে ৫৩৫ কিলোহার্টজ থেকে ১৬০৫ কিলোহার্টজ। আর PM বা Frequency Modulation রেডিও সিগন্যালের ফ্রিকোয়েন্সি হয় ৮৮ মেগাহার্টজ থেকে ১০৮ মেগাহার্টজ। AM রেডিও ট্রান্সমিশনে ফ্রিকোয়েন্সি একই থাকে কিন্তু এমপ্লিচিউড ভিন্ন হয়। FM রেডিও ট্রান্সমিশনে ভিন্ন ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে সিগন্যাল ট্রান্সমিট করা হয়।
ডিজিটাল সিগন্যাল
কম্পিউটার নিজের সাথে যােগাযােগের জন্য ব্যবহার করে ডিজিটাল সিগন্যাল। ডিজিটাল সিগন্যালকে প্রকাশ করা হয় স্কয়ার ওয়েভ দিয়ে। কম্পিউটারে সকল ডাটা, সংখ্যা, অক্ষর সবকিছু বাইনারি হিসেবে প্রকাশ করা হয়। বাইনারি পদ্ধতিতে থাকে কেবল ১ ও ০। ডিজিট্যাল সিগন্যালেও তেমনি থাকে অন ও অফ। এই সিগন্যালের প্রতিটি ০ ও ১ কে বলা হয় বিট (bit)। কম্পিউটারের ডাটা পরিবহনের মৌলিক মাপ হলাে এই বিট। এই বিট এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে পরিবাহিত হয় ইলেকট্রিক সিগন্যাল হিসেবে। বুঝতেই পারছেন একটি ডকুমেন্টকে এভাবে পরিবহনের জন্য হাজার হাজার বিটের দরকার হবে। এরকম ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল যখন বিট হিসেবে পরিবাহিত হবে তখন তাকে বোঝানোর জন্য বিট স্ট্রিম (bit stream) শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হয়। পানি ডিজিটাল সিগন্যালিংকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়: কারেন্ট স্টেট এনকোডিং ও স্টেট ট্রানজিশন এনকোডিং। কারেন্ট স্টেট এনকোডিঙে প্রতি মুহূর্তে মিডিয়ার প্রবাহিত ভােল্টেজ দেখে নির্ধারণ করা হয় সেটি ১ না কি ০। যেমন +৫ ভােল্ট হলে ধরা যেতে পারে এটি বাইনরি ০ এবং – ৫ ভােল্ট দিয়ে বােঝানাে যেতে পারে বাইনারি ১। অন্যদিকে স্টেট ট্রানজিশন এনকোডিঙে অবস্থার পরিবর্তনকে ধরা যেতে পারে একেকটি বিট সিগন্যাল হিসেবে। যেমন উচ্চ ভোল্টেজ থেকে নিম্নগামী হওয়ার সময়কে ধরা যেতে পারে বাইনারি ১ হিসেবে, আর নিম্ন ভােল্টেজ থেকে উচ্চ ভোল্টেজে উঠার সময়কে ধরা যেতে পারে বাইনারি ০ হিসেবে।(সিগন্যালিং ও ডাটা কমিউনিকেশন)
ডিজিটাল সিগন্যালকে আমরা তুলনা করতে পারি ডিজিটাল ঘড়ির সাথে। এখানে প্রতি এক সেকেন্ডে আপনার ঘড়ির সেকেন্ডের ভিজিট বদলে যাবে। এক সেকেন্ড থেকে আরেক সেকেন্ড মধ্যবর্তী সময়ে কোনাে পরিবর্তন দেখতে পাবেন না। কিন্তু এনালগ ঘড়িতে এটি দেখা যায়। এনালগ মানেই সতত পরিবর্তনশীল। ডিজিটাল সিগন্যাল ট্রান্সমিশন অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে। এখানে প্রতিটি বিট ঠিকমতাে পরিবাহিত না হলে কম্পিউটার বুঝতে পারবে না সেই ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল দিয়ে কী বােঝানাে হয়েছে। কম্পিউটার ১ ও ০ ছাড়া কিছু বােঝে না বলে এর মধ্যবর্তী কোনাে সিগন্যাল বুঝতে পারবে না। কোনাে সিগন্যালকে ১ ও ০ তে পরিবর্তন করা সম্ভব না হলে সেই সিগন্যাল অব্যবহারযোগ্য। নেটওয়ার্কে কী পরিমাণ সিগন্যাল পরিবাহিত হচ্ছে তা জানার দরকার হতে পারে। একক সময়ে পরিবাহিত ডাটার পরিমাণকে বলা হয় ব্যান্ডউইডথ (bandwidth)। একে মাপা হয় প্রতি সেকেন্ডে কতটি বিট পরিবাহিত হচ্ছে তা দিয়ে। একে অবশ্য বিভিন্নভাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। যেমন:
(bps) = 1 bit/second
(Kbps) = 1,000 bits/second
(Mbps) = 1,000,000 bits/second
(Gbps) = 1,000,000,000 bits/second
অনেকেই কেবিপিএস বলতে কিলোবাইট পার সেকেন্ড বুঝিয়ে থাকে। আসলে বিট ও বাইট এক নয়। এক বাইট হলো প্রায় ৮ বিটের সমান।
এনালগ vs ডিজিটাল
এনালগ ও ডিজিটাল সিগন্যালের মধ্যে পার্থক্য বোঝা দরকার। এর মধ্যে ডিজিট্যাল সিগন্যালিং বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কম্পিউটার ব্যবহার করে ডিজিটাল সিগন্যাল। এনালগ সিগন্যাল কম্পিউটার নেটওয়ার্কিওে ব্যবহৃত না হলেও এটি দরকার হতে পারে যদি কেউ তাদের কম্পিউটারকে ক্যাবল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করতে চায়।
এনালগ সিগন্যালের সুবিধা সমুহ হলো:
- অডিও ও ভিডিও ট্রান্সমিশনের জন্য এ ধরনের সিগন্যাল বেশি উপযোগী।
- একই তথ্য পরিবহনের জন্য এনালগ সিগন্যাল ডিজিটাল সিগন্যালের চেয়ে কম ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করে থাকে।
- পৃথিবীর যেকোনো স্থানে এনালগ সিগন্যাল সিস্টেম পাওয়া যাবে।
- অন্যান্য সিগনাল নয়েজ এনালগ সিগন্যালকে কম প্রভাবিত করতে পারে।
ডিজিটাল সিগন্যালের সুবিধা হলো:
- এটি কম্পিউটার ডেটা পরিবহনের জন্য বেশ উপযোগী।
- ডিজিটাল ডেটাকে খুব সহজেই কমপ্রেস করা যেতে পারে। ডিজিটাল সিগন্যালকে এনক্রিপ্ট করা যেতে পারে।
- ডিজিটাল সিগন্যালিং ব্যবহার করে এমন ইকুইপমেন্ট সহজলভ্য ও দাম কম।
- ডিজিটাল সিগন্যাল অনেক পরিষ্কার, কারণ এখানে সবকিছুই পরিবাহিত হয় ১ ও ০ ব্যবহার করে।
কম্পিউটার কনিকেশনে একইসাথে এনালগ ও ডিজিটাল সিগন্যাল ব্যবহারের উদাহরণ হতে পারে ডায়াল- আপ নেটওয়ার্কিং। আমরা যখন এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ফোন লাইনের মাধ্যমে যুক্ত হই তখন দু’ধরনের সিগন্যালই ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটার ব্যবহার করে ডিজিটাল সিগন্যাল, কিন্তু ফোন লাইনে ব্যবহৃত হয় এনালগ সিগন্যাল। সুতরাং ফোন লাইনে আসা কোনাে সিগন্যাল কম্পিউটারের নিকট বােধগম্য হবে না। এজন্যই ব্যবহার করা হয় বিশেষ ডিভাইস মডেম। মডেম নামটি এসেছে মডুলেশন ডিমডুলেশন থেকে। যখন কম্পিউটার থেকে কোনাে সিগন্যাল ফোন লাইনের মাধ্যমে পাঠানাে দরকার হয় তখন কম্পিউটারের ডিজিটাল সিগন্যালকে মডেম এনালগ সিগন্যালে পরিবর্তন করে। একেই বলা হয় মডুলেশন (modulation)। আবার যখন ফোনের মাধ্যমে কোনাে সিগন্যাল আসে তখন সেটিকে এনালগ থেকে ডিজিটাল সিগন্যালে পরিবর্তন করে মডেম। এটিকে বলা হয় ডিমডুলেশন (demodulation)।
সিগন্যাল ট্রান্সমিশন
হলোলসগন্যাল এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে কোন পদ্ধতিতে যাবে সেটি নিধারণ করে সেই কম্পিউটার। কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ডিজিটাল সিগন্যাল পরিবহনের মােড বা টাইপের উপর নির্ভর করে একটি ডিভাইস আরেকটির সাথে কীভাবে যােগাযােগ করবে।। এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে সিগন্যাল পাঠানাের সময় অবশ্যই দুই কম্পিউটারের মধ্যে এমন একটি সমঝোতা থাকা দরকার যাতে বুঝতে পারে সিগন্যাল বিটের শুরু ও শেষ কোনটি। বিটের শুরু ও শেষ বুঝতে না পারলে গ্রহীতা কম্পিউটার সেই সিগন্যাল থেকে ডাটা পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। এই সিগন্যাল পাঠানাের সময় বিভিন্ন বিটের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিকে বলা হয় বিট সিনক্রোনাইজেশন (bit synchronization)। কম্পিউটার কমুনিকেশনে দু’ধরনের বিট সিনক্রোনাইজেশন ব্যবহৃত হয়: এসিনক্রোনাস (asynchronous) and সিনক্রোনাস (synchronous).
এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন
মডেম সাধারণত এই ধরনের ট্রান্সমিশন ব্যবহার করে থাকে। এ ধরনের ট্রান্সমিশনে প্রতি ক্যারেক্টার পাঠানাের সময় সেই বিট স্ট্রিমের আগে ও পরে একটি করে স্টার্ট ও স্টপ বিট পাঠানাে হয়। এই স্টার্ট ও স্টপ বিট দেখে গ্রহীতা কম্পিউটার বুঝতে পারবে কোন কোন বিট নিয়ে একেকটি ক্যারেক্টার। এধরনের ট্রান্সমিশনে অতিরিক্ত বিট যােগ করার দরকার পড়ে বলে সেটিকে এটি অধিক ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে থাকে।
Start bit | 8 bit character | Stop bit |
এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের বৈশিষ্ট্য সমূহ হলো:
- এতে অতিরিক্ত বিট ব্যবহার করা হয় বলে এটি সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের চেয়ে কম দক্ষ।
- অল্প করে ডাটা পরিবহনের দরকার পড়ে এমন পরিবেশে, যেমন ইন্টারনেট, এই ট্রান্সমিশন উপযােগী।
সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন
সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনে স্টার্ট ও স্টপ বিট ব্যবহার করা হয় না। এখানে দুই কম্পিউটার আগেই নির্ধারণ করে নেয় একটানা কতক্ষন তারা সিগন্যাল ট্রান্সমিট করবে। এই টাইমিঙের উপর নির্ভর করে সিগন্যাল ট্রান্সমিশনে কিছুক্ষণ পরপর বিরতি দেয়া হবে যাতে দু’জনে কী ট্রান্সমিট করল তা সিনক্রোনাইজ করে নিতে পারে।
SYN Character | SYN Character | SYN Character |
Countinuous Bit stream of many characters |
সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের বৈশিষ্ট্য হলো:
- অতিরিক্ত স্টার্ট ও স্টপ বিট না থাকায় এ ধরনের ট্রান্সমিশন এসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনের চেয়ে অনেক দ্রুত হয়।
- ক্যারেক্টার হিসেবে প্রবাহিত না হয়ে ব্লক হিসেবে ডাটা পরিবাহিত হয়।
ট্রান্সমিশন মােড
ডাটা কীভাবে প্রবাহিত হয় তা বােঝার পর এখন আমরা দেখব ট্রান্সমিশন মিডিয়ার মধ্য দিয়ে সিগন্যাল কীভাবে প্রবাহিত হয়। কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মিডিয়া হলাে ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল। ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল জোড়া তার পেঁচানো অবস্থায় থাকে। টেলিফোন সিস্টেম এ ধরনের ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলই ব্যবহৃত হয়। এরকম মিডিয়ায় তিন ধরনের ট্রান্সমিশন হতে পারে:
- সিমপ্লেক্স,
- হাফ ডুপ্লেক্স ও
- ফুল ডুপ্লেক্স।
সিমপ্লেক্স ট্রান্সমিশন
সমরেস (Simplex) ভ্রান্সমিশনে সিগন্যাল কেবল একদিকে প্রবাহিত হতে পারে। এতে ওই পথে বিপরীত দিকে সিগন্যাল যেতে পারে না। একে আমরা তুলনা করতে পারি লাউড স্পিকারের সাথে। লাউড স্পিকার থেকে শব্দ বের হয়ে শ্রোতার কাছে পৌছে, কিন্তু শ্রোতার কাছ থেকে কোনাে সিগন্যাল লাউড স্পিকারে যেতে পারে না।
হাফ ডুপ্লেক্স ট্রান্সমিশন
হাফ ডুপ্লেক্স (half duplex) ট্রান্সমিশনে সিগন্যাল উভয়দিকে প্রবাহিত হতে পারে, তবে একদিকের সিগন্যাল ট্রান্সমিশন শেষ হলেই কেবল অপর দিকের সিগন্যাল বিপরীত দিকে যেতে পারে। টেলিফোন নেটওয়ার্কে এই পদ্ধতির ট্রান্সমিশন ব্যবহৃত হয়।
ফুল ডুপ্লেক্স ট্রান্সমিশন
ফুল ডুপ্লেক্স (full duplex) ট্রান্সমিশনে সিগন্যাল উভয়দিকে প্রবাহিত হতে পারে এবং সেটি একইসাথে হতে পারে। ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলে ফুল ডুপ্লেক্স ট্রান্সমিশন হতে পারে যদি ফুল ডুপ্লেক্স ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। ফুল ডুপ্লেক্স ট্রান্সমিশনে উভয় দিকের ডিভাইসকে ফুল ডুপ্লেক্স কম্প্যাটিবল হতে হবে।
বেসব্যান্ড এবং ব্রডব্যান্ড
মিডিয়ার মধ্য দিয়ে সিগন্যাল ট্রান্সমিশনের ওপর ভিত্তি করে একে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি: বেজব্যান্ড ও ব্রডব্যান্ড। এ দুটি আসলে সিগন্যাল এনকোডিং মেথড এবং মিডিয়া চ্যানেলকে কীভাবে ব্যবহার করছে তা নির্দেশ করে। আমরা এখন এ দুটি ট্রান্সমিশন পদ্ধতি সম্পর্কে জানব।
বেসব্যান্ড ট্রান্সমিশন
বেজব্যান্ড (baseband) ট্রান্সমিশনে ডিজিটাল সিগন্যাল ব্যবহৃত হয় এবং এটি পুরাে চ্যানেল জুড়ে প্রবাহিত হয়। ফলে একই চ্যানেলে একাধিক সিগন্যাল প্রবাহিত হতে পারে না। বেশিরভাগ ল্যানেই এধরনের সিগন্যাল ব্যবহৃত হয়।
ব্রডব্যান্ড ট্রান্সমিশন
এ ধরনের ট্রান্সমিশনে এনালগ সিগন্যাল ব্যবহৃত হয় এবং এতে একই মিডিয়ায় একাধিক সিগন্যাল পরিবাহিত হতে পারে। একাধিক সিগন্যাল একই চ্যানেল ব্যবহার করে পরিবাহিত হয় বলে এতে ইন্টারফের্যাল (interference) বেশি হয় এবং এর এটিনুয়েশন বেশি। এ ধরনের একটি ট্রান্সমিশন ব্যবহৃত হয় আইএসডিএন (ISDN) সিগন্যালিঙে।
সারকথা
নেটওার্কে ডাটা কীভাবে পরিবাহিত হয় তা বােঝার জন্য বিভিন্ন ধরনের সিগন্যালিং সম্পর্কে জানা দরকার। এ অবরে অশর বিভিন্ন ধরনের সিগন্যালিং পদ্ধতি সম্পর্কে জেনেছি। এনালগ সিগন্যালে প্রতিমুহূর্তে এটি অবস্থান পরিবর্তন করে। কিন্তু ডিজিট্যাল সিগন্যালে কেবল দুটি অবস্থা থাকতে। পারে: অন কিংবা অফ। অন পজিশন দিয়ে সাধারণত বাইনারি ১ ও অফ পজিশন দিয়ে বাইনারি ০ বােঝায়। সিগন্যালের কোন পজিশন কী বােঝাবে তার জন্য রয়েছে বিভিন্ন সিগন্যালিং স্কীম। কম্পিউটার ডাটা লেনদেন করে ডিজিটাল সিগন্যালের মাধ্যমে। এনালগ সিগন্যাল বুঝতে পারে না কম্পিউটার। সেজন্য ফোন লাইন ব্যবহার করে কোনাে কম্পিউটারের সাথে ডাটা লেনদেন করতে হলে মডেম নামের একটি ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়। মডেমের কাজ হলো ডিজিটাল সিগন্যালকে এনালগ এবং এনালগ সিগন্যালকে ডিজিটালে রূপান্তর করা।