বিভিন্ন ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম
বিভিন্ন ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম নেটওয়ার্ক কেবল সার্ভার সফটওয়্যার ইনস্টল করলেই চলবে না, প্রতিটি ওয়ার্কস্টেশন চাই ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার। ক্লায়েন্ট মেশিনে ব্যবহার করা হয় ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম। একটি নেটওয়ার্কে কী কী ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা যায় এবং কোনটির কী সুবিধা সে সম্পর্কে জানা দরকার। এখন আমরা বিভিন্ন ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আলােচনা করব।
DOS CLIENT
আজকের পিসির জনপ্রিয়তার মলে আছে মাইক্রোসফট ডস এর ভূমিকা। মাইক্রোসফট ডসই প্রথম পিসি অপারেটিং সিস্টেম। তবে এর অনেক অসুবিধা। এটি স্ট্যান্ড অ্যালােন কম্পিউটারের উপযােগী হলেও নেটওয়ার্কে একে ব্যবহার করা যায়না। ডসে নেটওয়ার্ক সাপাের্ট নেই, এর জন্য বিভিন্ন সার্ভারের উপযােগী ক্লায়েন্ট সফটঅয়্যার পাওয়া যায়। যেমন নেটওঅয়্যার সার্ভারের সাথে সংযােগ গড়ার জন্য আছে ডস ক্লায়েন্ট ফর নেটঅয়্যার এবং উইন্ডােজ এনটি’র ক্লায়েন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য আছে মাইক্রোসফট ল্যান ম্যানেজার। ডসে কোনাে গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস না থাকায় এটিতে কাজ করা অনেকের জন্যই অসুবিধাজনক। ডসের পরে আসে উইন্ডােজ। উইন্ডােজে নেটওয়ার্কিং যােগ করা হয় উইন্ডােজ ফর ওয়ার্কগ্রুপ বা উইন্ডােজ ৩.১১ থেকে । তবে এই অপারেটিং সিস্টেমের দূর্বলতা হলাে এসবে মাল্টি টাস্কিং ছিল না। উইন্ডােজে মাল্টিটাস্কিং তখনও খুবই শৈশবাবস্থায়। বর্তমানে এ দুটি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয় না বললেই চলে।
উইন্ডোজ ৯৫/৯৮ ক্লায়েন্ট
উইন্ডোজ ৩.x এর পর ১৯৯৫ সালের আগস্ট মাসে এল মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডােজ ৯৫ উইন্ডোজ ৯৫ যুগান্তকারী এই জন্য যেতে সত্যিকার অর্থেই গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস যােগ করা হলাে। এ মাল্টিটাস্কিং উন্নত হলাে এবং এর স্থিরতা বাড়ল। ইন্টেল বেইজড কম্পিউটারের জন্য উপযোগী একটি নেটওয়ার্ক সচেতন অপারেটিং সিস্টেম হলাে মাইক্রোস উইন্ডোজ ৯৫। এটি দুই ধরনের মাল্টিটাস্কিং ব্যবহার করে। ৩২- বিট এপ্লিকেশনের জন্য এটি প্রিন্স (preemptive) মাল্টিটাস্কিং ব্যবহার করে, কিন্তু ১৬- বিট কিংবা ডস এপ্লিকেশনের জন্য এটি ব্যবহার। কো অপারেটিভ মাল্টিটাস্কিং। সে কারণেই দেখা যেত উইন্ডোজ ৯৫ এ কোন একটি প্রােগ্রাম হ্যাং করলে অপারেটিং সিস্টেমই হ্যাং করছে। তখন রিস্টার্ট করা ছাড়া উপায় ছিল না। উইন্ডােজ ৩.x আর উইন্ডােজ ৯৫ এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্যা হলাে এদের গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস। উইন্ডােজ ৩. x এ ব্যবহার করা হতাে প্রােগ্রাম ম্যানেজার। উইন্ডােজ ৯৫ এ প্রােগ্রাম ম্যানেজারের পরিবর্তে এলাে। উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার। এর গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস ইউজারকে নানাবিধ সুবিধা দিতে লাগল। নেটওয়ার্ক কম্পোনেন্ট ইনস্টল ও কনফিগারেশন আগের চেয়ে অনেক উন্নত হলাে। বড় সুবিধা হলাে এতে অনেক ডিভাইসের জন্য প্লাগ এন্ড প্লে ফিচার যােগ করা হলাে। তার মানে আপনি যদি প্রচলিত নেটওয়ার্ক এডাপ্টার ইনস্টল করেন তাহলে এর সেটিংস কম্পিউটার প্রায় আপনাআপনি সেরে ফেলে। উইন্ডোজ ৯৫ এর ব্যাপক সাফল্যের পর এর উত্তরসূরী উইন্ডোজ ৯৮ বাজারে ছাড়া হলাে। এটিতে নেটওয়ার্কিং ফিচার বাড়ানাে হলাে। এর ইউজার ইন্টারফেসেও পরিবর্তন আনা হলাে। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৪ এর একটিভ ডেস্কটপ ফিচারের কারণে এটি অনেক আকর্ষণীয় হয়ে উঠল। এটিতেও প্লাগ এন্ড প্লে হার্ডঅয়্যার ব্যবহৃত হতে লাগল। ইউজারের ব্যবহারযােগ্যতার দিক থেকে এদুটি অপারেটিং সিস্টেম ভালাে হলেও এ দুটি অপারেটিং সিস্টেম ডিজাইনে নিরাপত্তার বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি। এর ফল হলাে দুই অপারেটিং সিস্টেমের কোনটিই নেটওয়ার্কে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ নয়। এর ফাইল সিস্টেম FAT কিংবা FAT32 হওয়ায় এতে লােকাল সিকিউরিটি পাওয়া যায় না।
উইন্ডােজ এনটি/২০০০/এক্সপি/ভিস্তা
উইন্ডােজ ৯৫ ও ৯৮ গড়ে উঠেছে এমএস- ডসের উপর ভিত্তি করে। সেকারণে এদুটি অপারেটিং সিস্টেম ডসের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে নি। ডসের এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে মাইক্রোসফট একটি নেটওয়ার্ক উপযােগী নিরাপদ ও স্ট্যাবল অপারেটিং সিস্টেম উদ্ভাবনে মন দেয়। এরই ফল হলাে উইন্ডােজ এনটি। উইন্ডােজ এনটি’র রয়েছে দুটি শ্রেনী- ওয়ার্কস্টেশন এবং সার্ভার। উইন্ডােজ এনটি ওয়ার্কস্টেশনকে ডিজাইন করা হয়েছে ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম কিংবা নেটওয়ার্কে ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে। এর রয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এবং এটি ব্যবহার করতে হলে তাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে। লগঅন করতে হলে অবশ্যই ওই কম্পিউটারে তার একটি ইউজার একাউন্ট থাকতে হবে। তাছাড়া এতে NTFS ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করা হলে লােকাল। মেশিনেও একসেস কন্ট্রোল করা যেতে পারে ফাইল ও ফোল্ডার লেভেল একসেস কন্ট্রোলের মাধ্যমে। এতে রিমোট একসেস সার্ভিসের সুবিধা আছে। উইন্ডােজ এনটি প্রিএম্পটিভ মাল্টি টাস্কিং ব্যবহার করে এবং এতে MS-DOS ও ১৬- বিট এপ্লিকেশন চলে ভিন্ন। মেমার স্পেসে। ফলে একটি প্রােগ্রাম হ্যাং হয়ে গেলে পুরাে অপারেটিং সিস্টেম হ্যাং হয় না। নিরাপদ ও স্ট্যাবল ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম চাইলে উইন্ডােজ এনটি ওয়ার্কস্টেশন হবে ভালাে অপশন। উইন্ডােজ এনটি’র পরে আরাে উন্নত ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম হলাে উইন্ডােজ ২০০০ প্রফেশনাল। এর গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসের উন্নতি ঘটেছে, সেই সাথে বেড়েছে নির্ভরযােগ্যতা। তবে এরপরের ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোসফট এক্সপি অনেক জনপ্রিয়। বস্তুত মাইক্রোসফটের ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেমসমূহের মধ্যে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এক্সপি প্রফেশনাল হলে সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য ও ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম। ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ভিস্তি সবচেয়ে নিন্দিত ও অগ্রহণযোগ্য অপারেটিং সিস্টেম। এটির কারণে মাইক্রোসফট অনেক সমালোচনার মুখে পড়েছে এবং ইউজাররা আগের ভার্সনে ফিরে গেছে।
উইন্ডোজ ৭
উইন্ডোজ ৭ কে বলা হচ্ছে এখন পর্যন্ত মাইক্রোসফটের তৈরি করা সর্বোৎকৃষ্ট অপারেটিং সিস্টেম। উইন্ডোজ। ডিয়ার ব্যাপক ব্যর্থতার পর এটি এখন জনপ্রিয়তা পেয়েছে।এতে ভিজুয়াল ইন্টারফেস অনেক চমৎকার করা হয়েছে এবং সেই সাথে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে। উইন্ডােজ ভিস্তার চেয়ে অনেক কম প্রসেসিং কয়তা ও মেমরি নিয়ে এটি অনেক ভাল পারফরম্যান্স দিতে পারে। তবে উইন্ডােজ ৭ এর রয়েছে অনেকগুলি সংস্করণ। উইন্ডােজ ৭ আলটিমেট ভার্সন ছাড়া অন্যগুলিতে নেটওয়ার্কের ব্যবহার সীমিত রাখতে হবে।
ম্যাক ওএস/এক্স
উইন্ডােজ ৯৫ এর অনেক আগে থেকেই গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস দিয়ে আসছে ম্যাকিন্টশ। ম্যাকিন্টশে ব্যবহৃত হয় ম্যাক ওএস। ম্যাক ওএস এমনই যে এতে ইউজারদের ওই সিস্টেম সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে হয় না, কোথায়। কোথায় ক্লিক করতে হবে এটি জানলেই চলে। এজন্য ননটেকনিক্যাল লােকদের প্রিয় অপারেটিং সিস্টেম হলাে এটি। আর এই অপারেটিং সিস্টেম কেবল ম্যাকিন্টশ কম্পিউটার সমূহেই চলে। ম্যাক ওএস ৮ এর আগ পর্যন্ত এতে নেটওয়ার্কিঙের তেমন সুবিধা ছিল না। এর এপলটক ও লােকালটক ব্যবহার করেই নেটওয়ার্ক বানাতে হতাে। অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের সাথে ফাইল লেনদেন ও যােগাযােগ বেশ কঠিন। হিল। সে কারণে বড় ধরনের ব্যবসায়িক কাজে নিয়োজিত নেটওয়ার্কে ম্যাকিন্টশ কম্পিউটার ব্যবহার সীমিত। এটি গ্রাফিক্স ও ভিডিও এডিটিঙের জন্যই বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে বর্তমানে ইন্টেল-বেজড কম্পিউটারসমূহ উচ্চগতি পাওয়ার সাথে সাথে এসব কাজের জন্য ম্যাকিন্টশ সমকক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনার নেটওয়াকে ম্যাকিন্টশ কম্পিউটার থাকলে বাধ্য হয়েই আপনাকে ম্যাক ওএস ব্যবহার করতে হবে।
সারকথা
নেটওয়ার্কে ক্লায়েন্ট ও সার্ভার হিসেবে থাকে বিভিন্ন এপ্লিকেশন ও সার্ভিস। এসব এপ্লিকেশন বা সার্ভিসের বেশিরভাগই চলে সার্ভারে। তাই সার্ভার হার্ডঅয়্যার অন্যান্য ক্লায়েন্ট মেশিনের চেয়ে উন্নত হওয়া দরকার। সাভার অপারেটিং সিস্টেম হওয়া দরকার কিছু বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। সার্ভার অপারেটিং সিস্টেমের তিনটি বড় বৈশিষ্ট্য হলাে মাল্টিটাস্কিং, মাল্টিপ্রসেসিং এবং স্ট্যাবিলিটি। মাল্টিটাকিং হলাে একসাথে একাধিক নির্দেশ পালনের ক্ষমতা। মাল্টিপ্রসেসিং বলতে বােঝানাে হয় একটি অপারেটিং সিস্টেম একসাথে কয়টি প্রসেসর ব্যবহার করতে পারে। স্ট্যাবিলিটি বলতে বোঝায় একটি অপারেটিং সিস্টেম একটানা কতক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতে পারে। সার্ভার হার্ডঅয়্যারের ক্ষেত্রেও তেমনি তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার: নির্ভরযােগ্যতা, সম্প্রসারণযােগ্যতা এবং ফল্ট টলারেন্স। সার্ভারে ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার অবশ্যই নির্ভরযোগ্য ও সম্প্রসারণ যােগ্য হতে হবে যাতে এটি কোনােরকম ত্রুটি ছাড়াই কাজ করতে পারে এবং প্রয়ােজনে তাতে নূতন কম্পােনেন্ট যােগ করা যেতে পারে। ফল্ট টলারেন্স হলাে সেই সিস্টেম যেখানে কোনাে সাবসিস্টেমের একটি অংশ বিকল হয়ে গেলেও সেটি অন্য অংশকে নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারে। নেটওয়ার্ক সার্ভারে ব্যবহৃত কয়েকটি সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম হলাে: মাইক্রোসফট উইন্ডােজ এনটি, উইন্ডােজ ২০০০/২০০৩/২০০৮, ইউনিক্স, লিনাক্স, নভেল নেটঅয়্যার, ইত্যাদি। এছাড়া ক্লায়েন্ট অপরেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহৃত হয় উইন্ডােজ ৯৫/৯৮, উইন্ডােজ এনটি ওয়ার্কস্টেশন, উইন্ডােজ ২০০০ প্রফেশনাল, উইন্ডােজ এক্সপি প্রফেশনাল, উইন্ডোজ ভিস্তা/৭, ইত্যাদি।