নেটওয়ার্কিং কি এবং কেন
নেটওয়ার্কিং কি এবং কেন দৈনন্দিন জীবনে আমরা নেটওয়ার্ক কথাটি শুনে থাকি। নেটওয়ার্ক হলাে এমন সিস্টেম যেখানে সবাই মিলে তথ্য শেয়ার করা যায় বা একসাথে কাজ করা যায়। যেমন ধরা যাক ডাক বিভাগ সারাদেশব্যাপী চিঠি ৬’ বিলি করে থাকে। এর জন্য ডাক বিভাগের আছে সারাদেশব্যাপী নেটওয়ার্ক। তাদের এ নেটওয়ার্কে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অফিস রয়েছে, রয়েছে কিছু নিয়মকানুন। সেই নিয়মকানুন মেনেই পুরো ডাকবিভাগ চলছে। এখানে তাদের নেটওয়ার্কের প্রতিটি অংশ একসাথে কাজ করছে। ডাকবিভাগের যদি এধরনের নেটওয়ার্ক না থাকে তাহলে তারা কাজ করতে পারবে না। কম্পিউটারের ক্ষেত্রেও এধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যায়। একটি কম্পিউটার যখন এক বা একাধিক কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত হয়ে তথ্য আদানপ্রদান করে তখন বলা হয় সেই কম্পিউটারটি নেটওয়ার্কের অংশ। নেটওয়ার্ক করার জন্য ন্যূনতম দুটি কম্পিউটার দরকার পড়বে। এসব কম্পিউটার পরষ্পর তথ্য আদান প্রদানের জন্য বিশেষভাবে বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে একটি আরেকটির সাথে যুক্ত হয়। এছাড়া এক কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে কীভাবে যােগাযােগ গড়বে, কী হবে তাদের ভাষা, ইত্যাদি নিয়মকানুন আগেই নির্দিষ্ট করা থাকে। এ অধ্যায়ে আমরা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে মৌলিক ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করব। আমরা জানব নেটওয়ার্ক কী, এটি ব্যবহারের সুবিধা কী, কীভাবে নেটওয়ার্কের উদ্ভব হলাে, নেটওয়ার্কের বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট সম্পর্কে।
নেটওয়ার্কিং এর মূল ধারণা
আমাদের দৈনন্দিন কাজসমূহকে সহজ করার জন্যই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। দুটি কম্পিউটারকে যখন। নেটওয়ার্কে নিয়ে আসা হয় তখন আমরা প্রধান যে সুবিধা পাই তা হলাে দুটি কম্পিউটার পরষ্পরের রিসাের্স শেয়ার। করতে পারে। রিসোর্স বলতে এখানে তথ্য এবং হার্ডওয়্যার ডিভাইস দুটোই বােঝায়। (নেটওয়ার্কিং কি এবং কেন) এক কম্পিউটারে রক্ষিত ডাটা বা তথ্য অন্য কম্পিউটার থেকে দেখা যেতে পারে যদি সেই তথ্য শেয়ার করা থাকে এবং উপযুক্ত পারমিশন। দেয়া হয়। তেমনি এক কম্পিউটারের সাথে যুক্ত হার্ডওয়্যার ডিভাইস, যেমন- প্রিন্টার, সিডিরম ড্রাইভ, হার্ডডিস্ক স্পেস, ইত্যাদি অন্য কম্পিউটারের সাথে শেয়ার করা যেতে পারে। তার মানে আপনার নেটওয়ার্কে একটি প্রিন্টার থাকলে নেটওয়ার্কের সব মেশিন সেটি ব্যবহার করতে পারবে। তেমনি একটি সিডিরম ড্রাইভ থাকলে অন্য কম্পিউটার থেকেও তা ব্যবহার করতে পারবে। নেটওয়ার্কিঙের প্রধান সুবিধা এটি, এবং এর জন্যই লােকে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। কেবল হার্ডডিস্ক কিংবা ডিভাইস শেয়ার করা নয়, মূল গুরুত্ব দেয়া হয় তথ্য শেয়ারিঙের ওপর। নেটওয়ার্ক ব্যবহারের আগে এক কম্পিউটারের সাথে আরেক কম্পিউটারের তথ্য বিনিময়ের তেমন সুবিধা ছিল না। যেমন ধরা যাক আপনি একটি ওয়ার্ড ডকুমেন্ট তৈরি করলেন কোনাে একটি কম্পিউটারে যার সাথে প্রিন্টার সংয্ নেই। এখন সেই ডকুমেন্টকে প্রিন্ট দিতে চাইলে এমন কম্পিউটারে যেতে হবে যেখানে প্রিন্টার যুক্ত আছে। সেই ফাইলটি ওই প্রিন্টারযুক্ত মেশিনে নেয়ার জন্য সাধারণত ফ্লপি ডিস্ক ব্যবহার করা হয়। প্রথম কম্পিউটার থেকে সেই ফাইল ফুপিতে কপি করে দ্বিতীয় কম্পিউটারে নিতে হবে এবং সেখান থেকে প্রিন্ট দিতে হবে। এরকম সবাই যদি প্রিন্ট দিতে চায় তাহলে তা খুবই অসুবিধাজনক পরিস্থিতির দিকে মােড় নেবে। এভাবে ফ্লপি ব্যবহার করে এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে যাওয়ার পদ্ধতিকে ব্যঙ্গ করে বলা হয় স্নিকারনেট (sncakemet)। এই নিকাৱনেটের অসুবিধা থেকে বাঁচার জন্য অনেক সময় প্রত্যেক কম্পিউটারের সাথে ভিন্নভাবে ডিভাইস দেয়া হতাে। এটি ছিল ব্যয়বহুল।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ধরে নেয়া হয় অবশ্যই এক পক্ষ হবে প্রেরক আর অন্য পক্ষ গ্রাহক। প্রেরক বা উৎস। কম্পিউটার হলাে সেই কম্পিউটার যে অন্য কোনাে কম্পিউটারের নিকট তথ্য পাঠাতে চায়। আর যেই কম্পিউটারে নিকট সেই তথ্য পাঠানাে হবে সেটি হলাে গ্রাহক বা গন্তব্য। নেটওয়ার্কে কেবল যে কম্পিউটারই একটি আরেকটির সাথে যােগাযােগ স্থাপন করে তা নয়। অন্য ডিভাইস, যেমন নেটওয়ার্ক প্রিন্টার, একটি আরেকটির সাথে যােগাযােগ গড়ে তুলতে পারে। নেটওয়ার্কের মাঝে কোনাে কম্পিউটার, প্রিন্টার কিংবা অন্য যে কোনাে ডিভাইস যা তথ্য আদান প্রদান করতে পারে তাকে বলা হয় নোড (node) বা ডিভাইস (device)। কোন নেটওয়ার্ক বিভিন্ন ডিভাইস একটি আরেকটির নিকট তথ্য পাঠানোর জন্য অবশ্যই একটি মাধ্যম দরকার । পড়বে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডিভাইসসমূহকে যুক্ত করার জন্য ক্যাবল (cable) বা তার ব্যবহার করা হয়। একটি। লম্বা ক্যাবলের সাথে বিভিন্ন ডিভাইস সিরিয়্যালি যুক্ত থাকতে পারে, অথবা সকল ডিভাইস থেকে একটি করে । ক্যাবল নিয়ে কোন সেন্ট্রাল লােকেশনে যুক্ত করা যেতে পারে। এসব ক্যাবল সাধারণত কপার বা তামার হয়ে । থাকে। এগুলো ফোন লাইনের ক্যাবলের মতই তবে বেশ উচু মানের। তামার তার ছাড়াও অন্য ধরনের মাধ্যমও। রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে কাচ ও প্লাস্টিক হতে তৈরি ক্যাবল। এসব ক্যাবল ছাড়া বর্তমানে বাতাসকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ডিভাইসসমূহকে যুক্ত করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এটি করা হচ্ছে রেডিও কিংবা মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশন মাধ্যম। যখন একাধিক নেটওয়ার্ক একটি আরেকটির সাথে সংযােগ গড়তে পারে, এবং সংযােগ গড়ে তখন তাকে বলা। ইন্টার নেটওয়ার্ক (internetwork)। বিভিন্ন হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে কোন নেটওয়ার্ক নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করার পদ্ধতি হলো ইন্টারনেট ওয়ার্কিং (internetworking)। যদি দুটি ডিভাইস ভিন্ন প্রটোকল ব্যবহার করে তাহলে ইন্টার নেটওয়ার্কিং ডিভাইস ব্যবহার করে সে ডিভাইস দুটির মাঝে সংযােগ গড়া সম্ভব।
নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ
নেটওয়ার্কের কাজ ও গঠনের ধরন অনুসারে নেটওয়ার্ককে প্রধান তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে: একই বিল্ডিঙের মাঝে অবস্থিত বিভিন্ন কম্পিউটার নিয়ে গঠিত নেটওয়ার্ককে বলা হয় লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Local Area Network)। একে সংক্ষেপে ল্যান (LAN) বলা হয়। এ ধরনের নেটওয়া খুবই সহজ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এবং সাধারনত ইন্টারনেটওয়াকিং ডিভাইসের দরকার পড়ে না। একই শহরের মধ্যে অবস্থিত কয়েকটি ল্যানের সমন্বয়ে গঠিত ইন্টারনেটওয়ার্ককে বলা হয়। মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক (Metropolitan Area Network)।(নেটওয়ার্কিং কি এবং কেন) একে সংক্ষেপে ম্যান (MAN) । বলা হয়। এ ধরনের নেটওয়ার্কে ইন্টারনেট ওয়ার্কিং ডিভাইস দরকার পড়ে। দূরবর্তী ল্যানসমূহকে নিয়ে গড়ে ওঠে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (Wide Area Network)। একে । সংক্ষেপে ওয়্যান (WAN) বলা হয়। এ ধরনের নেটওয়ার্কের গঠন বেশ জটিল এবং সাধারণত বিশাল। ভৌগলিক এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। LAN, MAN ও WAN প্রত্যেকের গঠন একটি থেকে অপরটির আলাদা। এদের ভৌগলিক অবস্থান ছাড়াও ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য আছে। ল্যানে ব্যবহৃত ডিভাইসসমূহ সাধারণত খুবই সহজলভ্য ও স্বল্পমূল্যের হয়ে থাকে। অফিস আদালতে সাধারনত। এ ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয় এবং এটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে একজন লােকই যথেষ্ট। অন্যদিকে MAN কিংবা WAN- এর ক্ষেত্রে বেশ জটিল ও ব্যয়বহুল ডিভাইস ব্যবহারের দরকার পড়ে। এটি তৈরি করাও কঠিন। এধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার জন্য অভিজ্ঞ নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেটর দরকার পড়ে, এবং একজনের পক্ষে পুরাে নেটওয়ার্ক ম্যানেজ করা সম্ভব হয় না। এখানে উল্লেখিত নেটওয়ার্কগুলি ছাড়া ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক বা CAN নামে এক নেটওয়ার্কের কথা বলা। হয়। এটি সাধারণত এক বিল্ডিং থেকে আরেক বিল্ডিং কে সংযুক্ত করে উচ্চগতির ফাইবার অপটিক সংযােগের মাধ্যমে।
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN- ই ব্যবহার করে থাকি। ছােট- মাঝারি অফিস আদালত ও ব্যবসা-বাণিজ্যে এ নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য থাকে ডিভাইসসমূহের পরস্পরের মধ্যে তথ্য এবং রিসাের্স শেয়ার করা। ছােট- মাঝারি অফিসে LAN তৈরি করে প্রিন্টার, মডেম, স্ক্যানার, ইত্যাদি ডিভাইসের জন্য সাশ্রয় করা যেতে পারে।
কম্পিউটার ও অন্যান্য নেটওয়ার্ক ডিভাইসকে সংযুক্ত করার জন্য লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয় যাতে ডিভাইসগুলাে একটি আরেকটির রিসাের্স শেয়ার করতে পারে। ল্যানে এসব ডিভাইসকে যুক্ত করা হয় কমদামী ক্যাবলের মাধ্যমে। এখানে ব্যবহৃত ক্যাবলের সর্বোচ্চ অতিক্রমযােগ্য দূরত্ব ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কারণে LAN একই বিল্ডিং এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। চিত্র ১.২- এ কয়েকটি কম্পিউটার ক্যাবলের মাধ্যমে হাব নামের একটি ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে প্রায়ই হাব নামের এই ডিভাইসটি দেখা যাবে। এর কাজ হলাে বিভিন্ন কম্পিউটার থেকে বে হয়ে আসা ক্যবলগুলােকে একটি কেন্দ্রীয় স্থানে যুক্ত করা। নেটওয়ার্কে আসল তথ্য প্রবাহিত হয় বিভিন্ন কম্পিউটা থেকে আসা ক্যাবলের মাধ্যমে। প্রতিটি ক্যাবলের মধ্য দিয়ে আসা ডাটা প্রবাহিত হবে হাবের মধ্য দিয়ে। সুতর হাব নষ্ট হয়ে গেলে কম্পিউটার সমূহ ডাটা আদান প্রদান করতে পারবে না।। কোনাে কোম্পানি বা অফিসের আকারের ওপর নির্ভর করে একাধিক LAN থাকতে পারে। যেমন কোনাে একটি কোম্পানি যার প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে প্রায় শ’খানেক লােক কাজ করে সেখানে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের জ একটি করে LAN থাকতে পারে অথবা প্রতিটি ফ্লোরে ভিন্ন ভিন্ন LAN থাকতে পারে। যদি এসব ল্যানকে সং করার দরকার পড়ে তাহলে ব্রিজ (bridge) কিংবা রাউটার (router) নামের ডিভাইস লাগবে। এখ কম্পিউটার সমূহকে ক্যাবলে যুক্ত করার জন্য দরকার হবে আর একটা নেটওয়ার্ক ডিভাইস নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড বা LAN কার্ড। একে নেটওয়ার্ক এডাপ্টারও বলা হয়।
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বৈশিষ্ট্য গুলো হলো:
- এসব নেটওয়ার্ক ছােট এলাকায়, যেমন একই বিল্ডিঙের মধ্যে, ব্যবহৃত হয়।
- এসব নেটওয়ার্কে উচ্চগতি, সাধারনত ১০ এমবিপিএস, পাওয়া যায়।
- এর মাধ্যমে অনেক ডিভাইসে একসেস পাওয়া যায়।
- এ ধরনের নেটওয়ার্ক ল্যান উপযোগী বিশেষ ডিভাইস যেমন রিপিটার, হাব, নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক
মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক বা MAN একাধিক লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN এর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে ল্যানসমূহ থাকে একই শহরে। এধরনের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বেশ উচ্চগতিতে বিভিন্ন নেটওয়ার্ক তাদের তথ্য শেয়ার করতে পারে। বিভিন্ন সরকারি অফিস এর প্রধান ব্যবহারকারী। যেমন ধরা যাক ঢাকা শহরের প্রতিটি পুলিশ স্টেশনের নেটওয়ার্ককে নিয়ে গড়ে তােলা হলাে একটি নেটওয়ার্ক। তাহলে এটি হবে মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক বা MAN। ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক থেকে এর পার্থক্য হলাে এই যে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কে গতি কম থাকে, কিন্তু মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্কে আমরা বেশ উচ্চগতি পেতে পারি। এটি বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন অফিসকে যুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে, এবং ৫০- ৭৫ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বিভিন্ন ডিভাইস সরাসরি নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত, কিন্তু মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক প্রতিটি সাইটে যুক্ত থাকে নেটওয়ার্কে। এক্ষেত্রে সাধারণত টেলিফোন কোম্পানির ইনস্টলকৃত ক্যাবল। ব্যবহার করা হয় অথবা নিজে নূতন ক্যাবল ইনস্টল করার দরকার পড়ে।
মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক বৈশিষ্ট্য সমূহ হলো:
- মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্কে যুক্ত বিভিন্ন সাইট একই শহরে অথবা এর আশপাশ নিয়ে বিস্তিত থাকে।
- মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক মাধ্যমে মেগাবাইট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস), এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে গিগাবিট পার সেকেন্ড (জিবিপিএস) পাওয়া যেতে পারে।
- এর মাধ্যমে একাধিক ল্যানের মাঝে একটি গড়ে সংযােগ গড়ে ওঠে।
- এ ধরনের নেটওয়ার্ক বিভিন্ন ডিভাইস, যেমন- রাউটার, টেলিফোন, এটিএম সুইচ এবং মাইক্রোওয়েভ এন্টেনা, ব্যবহার করে থাকে।
ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক
বিস্তৃত ভৌগলিক এলাকায় অবস্থিত একাধিক LAN বা MAN-কে নিয়ে গড়ে ওঠে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক। এ ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে টেলিফোন কোম্পানির ক্যাবল ব্যবহার করে। সে কারণে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক। ধীরগতির হয়ে থাকে। বিস্তৃত এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠে বলে বিভিন্ন ল্যান ও ম্যানকে সংযুক্ত করার জন্য বিশেষ ডিভাইস ও টেকনােলজি ব্যবহার করা হয়। ল্যানের চেয়ে WAN গঠনের পরিকল্পনা সত্যিই বেশ কঠিন। এটি ম্যানেজ করা কঠিন। যদি গোটা বিশ্বজুড়ে কোনো LAN গড়ার দরকার পড়ে তাহলে অনেকক্ষেত্রেই স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয়।
বেশিরভাগ ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক ৫৬ কেবিপিএস থেকে ১.৫৪৪ এমবিপিএস গতিতে কাজ করে। এতে সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ৪৫ এমবিপিএস। ওয়্যানকে ধীরগতির বলা হলেও ধীরে ধীরে এর পরিবর্তন হচ্ছে।
ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বৈশিষ্ট্য সমূহ হলো:
- এসব নেটওয়ার্ক বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠতে পারে, এমনকি এর বিস্তৃতি গােটা বিশ্বজুড়ে হতে পারে।
- এগুলি ল্যানের চেয়ে সাধারণত ধীর গতির হয়ে থাকে।
- ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কের অবশ্যই কোনাে ইন্টারফেস ইন্টারনেটওয়ার্কিং ডিভাইস, যেমন রাউটার , মডেম, ওয়ান সুইচ, ইত্যাদি ব্যবহার করতে হয়।
নেটওয়ার্কের উৎপত্তি
নেটওয়ার্কিং জগতে প্রযুক্তি খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা সত্যিই দুরূহ হয়ে। পড়ে। তবে এসব পরিবর্তন সম্পর্কে প্রতিটি নেটওয়ার্ক পেশাজীবির সজাগ থাকা দরকার। প্রথম দিকের নেটওয়ার্ক ছিল মেইনফ্রেম ভিত্তিক। কম্পিউটারের প্রথম দিকে মেইনফ্রেম কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকত বিভিন্ন টার্মিনাল। এই মেইনফ্রেমের সাথে যুক্ত হওয়ার লাইন অনেকসময় বেশ দীর্ঘ হতাে, অনেক দূর থেকে সেসব মেইনফ্রেমে যুক্ত হওয়া যেত। দুটি নেটওয়ার্ক থেকে আজকের এই আধুনিক নেটওয়ার্কের জন্ম। প্রথমদিকের একটি নেটওয়ার্ক হলাে সেমি অটোমেটিক গ্রাউন্ড এনভায়রনমন্টে (SAGE) যা যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় বিভিন্ন রাডার স্টেশনের সরকারি কম্পিউটারসমূহকে যুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এটি করা হয়েছে ১৯৫৮ সালে। এরপর ১৯৬০ সালে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র গবেষকরা আইবিএম মেইনফ্রেম কম্পিউটারে কম্প্যাটিবল টাইম- শেয়ারিং সিস্টেম (CTSS) পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন। এই টাইম শেয়ারিং পদ্ধতির ফলে একই মেইনফ্রেম কম্পিউটারে একাধিক ব্যবহারকারী একাধিক কাজ একইসময়ে করতে সক্ষম হলাে। এরপর এর সাথে যুক্ত হলাে মডেম যাতে ব্যবহারকারীরা ডায়াল করে এতে যুক্ত হতে পারে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রথম ডায়াল- আপ সার্ভিস ব্যবহার করা হয়েছিল আমেরিকান এয়ারলাইন্সের নেটওয়ার্কে ১৯৬৪ সালে। আইবিএম এর রিজার্ভেশন সিস্টেম ৬৫টি শহরের ২০০০ কম্পিউটারকে যুক্ত করেছিল কেবল দুটি আইবিএম মেইনফ্রেম ও টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে।এখানে প্রতিটি শহরের টার্মিনালের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা রিজার্ভেশন সম্পর্কিত অনুসন্ধান চালাতে পারতাে। বিভিন্ন কোয়েরি প্রসেস করা হতাে কেন্দ্রের মেইনফ্রেম কম্পিউটারে। কোন ফ্লাইট সম্পর্কিত তথ্য তিন সেকেন্ডের মধ্যে পাওয়া যেত এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। ষাট ও সত্তর দশকের নেটওয়ার্কসমূহ মেইনফ্রেম ভিত্তিক হওয়ায় যে সকল প্রসেসিং চলত মেইনফ্রে। সাথে বিভিন্ন স্থান থেকে টার্মিনাল যােগ করা হতাে। এরপর এলাে ইথারনেট। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র রবার্ট মেটাকাফ তার পিএইচডি থিসিসের মধ্যে প্রথম ইথারনেটের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। তারপর গড়ে ওঠে পরীক্ষামূলক ইথারনেট নেটওয়ার্ক ALOHANet। আজকের দিনে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক হলো এই ইথারনেট (Ethernet)।
ইন্টারনেটের উৎপত্তি
সব ইউনিভার্সিটি ও প্রাইভেট কোম্পানি গুলো যখন মেইনফ্রেমের মাধ্যমে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার চেষ্টায়। রত সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ নিজস্ব নেটওয়ার্ক গড়ায় মনােনিবেশ করে। ষাটের দশকের প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ এডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি (ARPA) নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় যার উদ্দেশ্য ছিল এমন এক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যাতে যুদ্ধের সময়ও এক সামরিক ঘাঁটি থেকে আরেক সামরিক ঘাঁটির সাথে যােগাযােগ অবিচ্ছিন্ন থাকে। এই নেটওয়ার্ককে বলা হয় আরপানেট। (নেটওয়ার্কিং কি এবং কেন) বছর দশেকের মধ্যে এটি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যুক্ত করে ফেলে এবং ১৯৭১ সালের মধ্যে এর ২৩টি নােড প্রতিষ্ঠিত হয়। এসময় এ নেটওয়ার্কের প্রধান ব্যবহার ছিল ইলেকট্রনিক মেইল আদান-প্রদান।’ ; আশির দশকে আরপানেট বৃদ্ধি পেতে থাকল এবং ১৯৮৯ সালে এসে এটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলাে ইন্টারনেট, আর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জন্য রইল ডারপানেট। ইন্টারনেটের জন্ম এই আরপানেট থেকেই। ইন্টারনেট আমাদের দেখিয়েছে কিভাবে বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কে যুক্ত করা যায় এবং গােটাবিশ্বকে একই নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। ইন্টারনেট কেবল একটি নেটওয়ার্ক নয়। এটি হলাে নেটওয়ার্কসমূহের নেটওয়ার্ক। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক হলাে এই ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের ব্যাপক বিস্তৃতিতে এটি নিশ্চিত যে ভবিষ্যতে প্রতিটি ডিভাইসই এ নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে। বাড়বে নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটওয়ার্কের ব্যবহার।
সারকথা
এক কম্পিউটারকে আরেক কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করে তথ্য ও ডিভাইস শেয়ার করার পদ্ধতিই হলাে নেটওয়ার্কিং। নেটওয়ার্ক তৈরির মূল উদ্দেশ্য হলা রিসোর্স শেয়ার করা। বিভিন্ন রিসাের্স শেয়ারের সুবিধার ফলে অফিস আদালতে এটি বেশ কাজে লাগে। একই ডিভাইস অনেকে ব্যবহার করতে পারে এবং খুবই কম সময়ে পরস্পরের সাথে যােগাযােগ করতে পারে। প্রাথমিকভাবে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়: লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক, মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক এবং ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে একই বিল্ডিঙের কম্পিউটারসমূহ নিয়ে। মেটোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক একটি শহরের বিভিন্ন অফিসকে যুক্ত করতে পারে। (নেটওয়ার্কিং কি এবং কেন) আর ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বিস্তৃত এলাকা নিয়ে গড়ে উঠে। মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক ও ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক গড়ার জন্য বিভিন্ন ইন্টারনেটওয়ার্কিং ডিভাইস দরকার হয়। প্রথমদিকের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে মেইনফ্রেমকে ভিত্তি করে। এরপর রবার্ট মেটাকাফ ইথারনেট উদ্ভাবন করেন এবং গড়ে ওঠে এলােহানেট। এর অনেক পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে জন্ম নেয় আরপানেট, যা আজকের ইন্টারনেটের জন্ম দিয়েছে। ইন্টারনেট বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয় এক নেটওয়ার্ক। প্রতিটি ডিভাইসকে এই নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে এবং অচিরেই সেটি বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তখন কোন ডিভাইসই নেটওয়ার্কের বাইরে থাকবে না।
HOME