OSI মডেল কী ও কেন?
OSI মডেল কী ও কেন? কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ বলতে বোঝানো হয় এক বা একাধিক লোকের সাথে তথ্যের আদানপ্রদান। আমি যা বলতে চাচ্ছি তা যদি অন্য কাউকে বোঝাতে পারি তাহলে তার সাথে আমার যােগাযােগ গড়ে | উঠেছে বলা যায়। এ পুস্তকে আমি যা বলতে চাচ্ছি তা যদি পাঠক বুঝতে পারে তাহলে পাঠকের সাথে। আমি কমিউনিকেট করতে পারছি বলা হবে। পাঠকের সাথে আমার কমিউনিকেশন কতকগুলাে নিয়ম মেনে চলবে। যেমন আমি যে ভাষায় লিখব সে ভাষা পাঠকের জানা থাকতে হবে। আবার আমি যা পাঠককে বলতে চাই সেটি অবশ্যই এখানে প্রকাশ করতে হবে। প্রতিটি ক্যুনিকেশনের জন্যই এধরনের কিছু নিয়মকানুন থাকে। নেটওয়ার্কে একটি কম্পিউটার আরেকটি কম্পিউটারের সাথে কীভাবে কমুনিকেট করবে তারও আছে কিছু নিয়মকানুন। ক্যুনিকেশন অনেকক্ষেত্রেই দ্বিপাক্ষিক। আমি যা বলতে চাচ্ছি সেটি মুখে প্রকাশ না করার পরও আমার কোনাে পাঠক বুঝতে পারলে সেটি স্ট্যান্ডার্ড কমুনিকেশন হবে না। এর জন্য আছে সর্বজন স্বীকৃত মডেল। মানুষের মতাে কম্পিউটার কীভাবে একটি আরেকটির সাথে কম্যুনিকেট করবে তার জন্যও নির্দিষ্ট মডেল রয়েছে। এদের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মকানুন দরকার পড়ে। নেটওয়ার্কের মধ্যে একটি ডিভাইস আরেকটি ডিভাইসের সাথে কীভাবে যােগাযােগ করবে তার নিয়মকানুন বলে দেয়ার জন্য আছে ওপেন সিস্টেস ইন্টারকানেক্ট মডেল বা OSI Model। নেটওয়ার্কের সমস্ত ডিভাইসের কার্যপ্রণালীর নিয়ম সংজ্ঞায়িত করা আছে এই মডেলে।। এ অধ্যায়ে আমরা OSI মডেল সম্পর্কে জানব। এর মাঝে দেখব OSI মডেল কী ও কেন, OSI লেয়ারের বিভিন্ন স্তরের কাজ কী, বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে যােগাযােগ কীভাবে ঘটে এবং OSI মডেল ও TCP/IP মডেলের মধ্যে মিল বা অমিল কতটুকু।
OSI মডেল কী ও কেন?
কম্পিউটার ও অন্যান্য নেটওয়ার্কিং ডিভাইসের মধ্যে যােগাযােগ কীভাবে গড়ে উঠবে তা নির্দেশ করে OSI মডেল। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডস (ISO) ১৯৭৪ সালে এই মডেল তৈরির কাজে হাত দেয়। এর অনেক আগে, ১৯৬৭ সালে তৈরি হয় TCP/IP প্রটোকল স্যুট। এই প্রটোকল স্যুট যে মডেল অনুসরণ করে তাকে বলা হয় ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স বা DOD মডেল। বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং ডিভাইস প্রস্তুতকারক যাতে এই স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে তাদের ডিভাইস প্রসব করতে পারে সেজন্যই OSI মডেলের প্রয়ােজন অনুভূত হয়। বিভিন্ন মহলে আলােচনা ও বিতর্কের পর ওএসআই মডেল চূড়ান্ত করা হয় ১৯৭৭ সালে। তারপর থেকে নেটওয়ার্কের কাজ বােঝার জন্য এই মডেল সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এটি যদিও তাত্ত্বিক একটি বিষয়, তবু এর সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকা দরকার। এই ধারণাই আপনাকে বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং ডিভাইসের কার্যপ্রণালী বুঝতে সাহায্য করবে।
OSI মডেলকে সাতটি লেয়ার বা স্তরে ভাগ করা হয়। এর স্তরসমূহ হলাে:
- এপ্লিকেশন,
- প্রেজেন্টেশন,
- সেশন,
- ট্রান্সপাের্ট,
- নেটওয়ার্ক,
- ডাটালিঙ্ক এবং
- ফিজিক্যাল।
প্রতিটি স্তরে নির্দিষ্ট ডিভাইস নির্দিষ্ট কাজ করে থাকে। এখানে উল্লেখিত লেয়ার বা স্তরসমূহ অবশ্যই ক্রম মেনে চলবে। OSI মডেলের একটি স্তর আরেকটির চেয়ে স্বতন্ত্র এবং একটি আরেকটির ওপর নির্ভরশীল নয়। প্রতিটি স্তর তার নিজের কাজ সারবে এবং এর উপরের কিংবা নিচের স্তরের জন্য ডাটাকে তৈরি করবে। কোনাে স্তরের সম্পর থাকতে পারে কেবল এর উপরের বা নিচের স্তরের সাথে।
OSI মডেলের ডেটা প্রবাহ
কোন ডিভাইস থেকে ডাটা প্রবাহিত হওয়ার সময় উৎস ডিভাইসে তা উপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হতে। থাকে। প্রতিটি লেয়ার সেই ডাটাকে নিয়ে কিছু কাজ করতে পারে। কোনাে ইউজার যখন কোনাে ডাটা পাঠানাের । চেষ্টা করে তখন সেটি প্রথম আসে এপ্লিকেশন লেয়ারে। আসলে এপ্লিকেশন লেয়ারেই সেই ডাটার জন্ম হয়। তারপর সেটি যায় এর পরবর্তী লেয়ার প্রেজেন্টেশন লেয়ারের কাছে। প্রেজেন্টশন লেয়ার সেটিকে পরবর্তী লেয়ারের জন্য প্রস’ত করে এবং তার সাথে কিছু হেডার তথ্য যােগ করে। এভাবে ডাটা প্যাকেট একটির পর একটি লেয়ার অতিক্রম করে এবং সবশেষে ফিজিক্যাল লেয়ারে পৌছে। ফিজিক্যাল লেয়ার সেটি ফিজিক্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গন্তব্য কম্পিউটারে পাঠায়। গন্তব্য কম্পিউটারের ফিজিক্যাল লেয়ার সেটি গ্রহণ করে এবং উপরের লেয়ারে পাঠায়। এভাবে সেটি এপ্লিকেশন লেয়ারের নিকট পৌছে (চিত্র ২.১)। ডেটার সাথে হেডার তথ্য যোগ করার পদ্ধতিকে বলা হয় এনক্যাপসুলেশন (encapsulation)। একে কখনও কখনও র্যাপিং (wrapping) বলা হয়ে থাকে। টোকেন রিং নেটওয়ার্কে ডাটা পাঠানাের আগে সেটিকে অবশ্যই। (OSI মডেল কী ও কেন)টোকেন রিং হেডার দিয়ে র্যাপ করে নিতে হবে। এনক্যাপসুলেশন ও র্যাপিং বলতে ডাটার সাথে হেডার বিট ও। শেষের বিট উভয়কে বােঝায়।
হেডার বিট দিয়ে ডাটার শুরু বােঝানাে হয়ে থাকে, এবং প্রটোকল ও লেয়ারের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন এড্রেসিং তথ্য থাকে এখানে। শেষের বিটগুলি ব্যবহৃত হয় এরর চেকিং বা চেকসামের জন্য। প্রটোকলের বেশিরভাগ ফিচারই হেডার বিটে থাকায় এটি বেশি গুরুত্ব পায়। OSI রেফারেন্স মডেলের প্রতিটি স্তরে এনক্যাপসুলেশন ঘটতে পারে। ডাটা প্যাকেটের সাথে প্রতিটি স্তরে নির্দিষ্ট হেডার যােগ হতে থাকে। আগের স্তর থেকে প্রাপ্ত ডাটা প্যাকেটকে পরের স্তরে হেডার ও ডাটাসহ ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে এবং সেই স্তরের হেডার তথ্য যােগ করে নূতন প্যাকেট তৈরি করে। এতে আগের স্তরের যােগ করা হেডারও থাকে। এভাবে নিচের স্তরে যাওয়ার সাথে সাথে ডাটা প্যাকেটের সাইজ ছােট হতে থাকে, কিন্তু তার সাথে। যুক্ত হেডার তথ্য বাড়তে থাকে। এর ফলে প্রতিটি ডাটা প্যাকেটের পুরাে সাইজ সমান ও পরিবহনযােগ্য হয়। | গ্রহীতা ডিভাইসে সেই ডাটা প্যাকেট পৌঁছার পর প্রতিটি স্তরে হেডার তথ্য বাদ যেতে থাকে। উৎস ডিভাইসের। ভাটালিঙ্ক স্তরে যে হেডার যোগ হয়, গ্রহীতা ডিভাইসে ডাটা লিঙ্ক সেই হেডার বাদ দেয় এবং প্যাকেটটি পরবর্তী স্তরে। অর্থাৎ নেটওয়ার্ক স্তরে পাঠায়। গ্রহীতা ডিভাইসের নেটওয়ার্ক স্তর উৎস ডিভাইসের নেটওয়ার্ক স্তরের যােগ করা। হেডার বাদ দেয় এবং ডাটা প্যাকেটকে পরবর্তী স্তর অর্থাৎ ট্রান্সপোের্ট স্তরে পাঠায়। এভাবে ক্রমে তা এপ্লিকেশন স্তরে পৌছে। উৎস ডিভাইসের এপ্লিকেশন স্তরে ডাটা যেরূপ ছিল তেমনটি দেখা যায় গ্রহীতা ডিভাইসের। এপ্লিকেশন স্তরে।
OSI মডেলের স্তরসমূহ
OSI মডেল প্রত্যেকটি স্তর কে এক একটি স্বাধীন মডেল হিসেবে গণ্য করা হয়। তত্ত্বগতভাবে এক স্তরের প্রটোকল কি সেই স্তরে কাজ করে এমন প্রটোকলের সাথে অদল-বদল করা যেতে পারে। এরকম প্রতিস্থাপন উপরের কিংবা নিচের স্তরকে প্রভাবিত করবে না। OSI মডেলে সাতটি লেয়ার বা স্তর আছে। এই সাতটি লেয়ার বা স্তরের প্রতিটির কাজ ভিন্ন এবং নেটওয়ার্কে ডাটা ফ্লো বা তথ্য প্রবাহ বুঝতে হলে প্রতিটি লেয়ারের কাজ বােঝা দরকার। সাতটি লেয়ারের কাজ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
স্তর ৭: এপ্লিকেশন লেয়ার।
এটি হল OSI মডেলের সপ্তম লেয়ার। এর কাজ হলাে ইউজার ও নেটওয়ার্ক সার্ভিসের মধ্যবর্তী উইন্ডাে হিসেবে। কাজ করা যাতে ইউজার কোনাে এপ্লিকেশন থেকে নেটওয়ার্ক সার্ভিস চাইলে সেটিকে OSI মডেলের পরবর্তী লেয়ারে পাঠাতে পারে।(OSI মডেল কী ও কেন) যেমন আপনি একটি মেইল ক্লায়েন্টে মেইল কম্পােজ করে পাঠাতে চাইলে প্রথমেই সেটি যাবে এপ্লিকেশন লেয়ার।
এপ্লিকেশন লেয়ারের কাজ গুলোকে আমরা নিজের মতো করে উল্লেখ করতে পারি:
রিসোর্স শেয়ারিং ও ডিভাইস রিডিরেকশন।
- রিমোট ফাইল একসেস
- রিমােট প্রিন্টার একসেস।
- ইন্টার প্রসেস কমিউনিকেশন (IPC)
- রিমোট প্রসিডিউর কল (RPC) সাপোর্ট।
- নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট
- ডিরেক্টরি সার্ভিসেস
- ইলেকট্রনিক মেসেজ
স্তর 6: প্রেজেন্টেশন লেয়ার
এই লেয়ার নেটওয়ার্ক সার্ভিসের জন্য ডাটা ট্রান্সলেটর হিসেবে কাজ করে। প্রেরণকারী কম্পিউটারে এই লেয়ার। এপ্লিকেশন লেয়ারের কাছ থেকে প্রাপ্ত ডাটাকে এর নিচের লেয়ারসমূহের বােধগম্য ফরম্যাটে রূপান্তর করে। আবার। গন্তব্য কম্পিউটারে প্রেজেন্টেশন লেয়ার ডাটা এপ্লিকেশন লেয়ারের বোধগম্য ফরম্যাটে রূপান্তর করে।
প্রেজেন্টেশন লেয়ার নিচের কাজগুলি করে থাকে:
- ক্যারেক্টার কোড ট্রান্সলেশন, যেমন ASCII থেকে EBCDIC ফরম্যাটে রূপান্তর।
- ডাটা কনভার্সন, যেমন ইনটিজারকে ফ্লোটিং পয়েন্টে রূপান্তর।
- ডাটা কমপ্রেশন, যাতে নেটওয়ার্কে ডাটা দ্রুত পরিবাহিত হতে পারে।
- ডাটা এনক্রিপশন ও ডিক্রিপশন, যাতে নেটওয়ার্কে পরিবাহিত ডাটা নিরাপদ থাকে।
এসব কাজকে আমরা আরাে ভালভাবে বােঝার চেষ্টা করবাে। প্রথমেই আসা যাক ক্যারেক্টার কনভার্সনের।(OSI মডেল কী ও কেন) ব্যাপারে। আমরা যখন কোনাে এপ্লিকেশনে কোনাে ডাটা, ধরা যাক ই- মেইল মেসেজ, তৈরি করি তখন তা সব সার্ভিস বা এপ্লিকেশনের বােধগম্য ফরম্যাটে থাকে না। এমনিতে সব কম্পিউটার বুঝতে পারে এরকম একটি। ফরম্যাট হলাে ASCII বা আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড কোড ফর ইনফরমেশন ইন্টারচেঞ্জ। এতে ৯৬টি অক্ষর ও ডিজিট। রয়েছে, সেইসাথে আছে ৩২টি নন- প্রিন্টিং ক্যারেক্টার। প্রেজেন্টেশন লেয়ার এপ্লিকেশন লেয়ারের কাছ থেকে। ডাটাকে সাধারণত এই ASCII ফরম্যাটেই রূপান্তর করে। আইবিএম মেইনফ্রেম কম্পিউটারের ক্ষেত্রে কমন ফরম্যাট হলাে EBCDIC বা এক্সটেন্ডেড বাইনারি কোডেড ডেসিমাল ইন্টারচেঞ্জ কোড। এতে আছে ২৫৬টি বিশেষ ক্যারেক্টার। আইবিএম মেইনফ্রেম সাথে ডাটা আদান প্রদানের সময় প্রেজেন্টেশন লেয়ার এপ্লিকেশন লেয়ার থেকে প্রাপ্ত ডাটাকে এই ফরম্যাটে রূপান্তর করবে। ডাটা কমপ্রেশন বলতে বােঝানাে হয় বড় ডাটা সাইজকে সংকুচিত করা। এর ফলে নেটওয়ার্কে ডাটা দ্রুত। পরিবাহিত হতে পারে। এপ্লিকেশন লেয়ারের কাছ থেকে আসা ডাটা প্যাকেটে অনেকসময় বেশ কিছু অপ্রয়ােজনীয় ডাটা থাকে, যেমন- স্পেস, লাইন ব্রেক, ইত্যাদি। এগুলিকে বাদ দিয়ে সহজেই ডাটা প্যাকেটকে। ছােট করা যায়। প্রেজেন্টেশন লেয়ার এসব প্যাকেট থেকে স্পেস বাদ দিয়ে ডাটা প্যাকেটকে ছােট করে।
একেই বলা হচ্ছে ডাটা কমপ্রেশন। চিত্র ২.২- এ দেখা যাচ্ছে কম্পিউটার ১ একটি বাক্য পাঠাচ্ছে কম্পিউটার ২ এর কাছে। এপ্লিকেশন লেয়াতের ডাটা থাকছে স্পেস ও ফরম্যাটিংসহ। এটি প্রেজেন্টেশন লেয়ারে গেলে প্রেজেন্টেশন লেয়ার এখান থেকে স্টে ফরম্যাটিং বাদ দিয়ে প্যাকেট সাইজ ছােট করে দিচ্ছে। তারপর প্যাকেটটি OSI লেয়ারের অন্যান্য লেয়ারের মধ্য দিয়ে পৌছাচ্ছে কম্পিউটার ২ এর প্রেজেন্টেশন লেয়ারে। প্রেজেন্টেশন লেয়ার এখানে কমপ্রেশড ডাটা প্যাকেট ডিকম্প্রেশন করবো এবং এপ্লিকেশন লেয়ার কাছে পাঠাবে। এপ্লিকেশন সেই ফরম্যাটেড ডাটাই পাবে। প্রেজেন্টেশন লেয়ার ডেটা এনক্রিপশন করে থাকে। এনক্রিপশন কি আমরা তুলনা করতে পারি সাইফার কোডের। সাথে। গোপন তথ্য পাঠানোর জন্য যেমন সাইফার কোড ব্যবহার করা হয়, তেমনি গােপন কোনাে তথ্য। নেটওয়ার্কে পাঠানাের জন্য ব্যবহার করা হয় এনক্রিপশন। এমনিতে সব ডাটা প্যাকেটের সাথে এনক্রিপশন। ব্যবহার করা হয় না, দরকারও পড়ে না। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে,(OSI মডেল কী ও কেন) যেমন পাসওয়ার্ড কিংবা ক্রেডিট কার্ড নম্বর। প্রেরণের সময় এটির দরকার হয়। নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ধরনের এনক্রিপশন ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে আছে। পাবলিক-প্রাইভেট কী (Public-Private key) এনক্রিপশন। এতে যার কাছে কী (key) থাকে সেই কেবল সে। ডাটা পড়তে পারে।
স্তর ৫: সেশন লেয়ার
সেশন লেয়ারের কাজ হলাে উৎস এবং গন্তব্য ডিভাইসের মধ্যে সংযােগ গড়ে তােলা, সেই সংযােগকে বহাল রাখা। এবং প্রয়ােজন শেষে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। একটি মেসেজ- মোড ডাটা ট্রান্সফারের কাজও করে থাকে।
সেশন লেয়ারের কাজগুলো নিম্নরূপ:
- প্রতিটি এপ্লিকেশন প্রসেসের জন্য একটি ইউনিক এড্রেস রেজিস্টার, যেমন NetBIOS, করতে পারে। এসব এড্রেসের মাধ্যমে সেশন লেয়ার প্রতিটি প্রসেসকে নেটওয়ার্ক এডাপ্টারের এড্রেস থেকে ভিন্ন করতে পারে।
- দুটি ভিন্ন ডিভাইসের মধ্যকার দুই প্রসেসের ইউনিক প্রসেস এড্রেসের মাধ্যমে দুই প্রসেসের মাঝে সংযােগ তৈরি, সেই সংযােগ রক্ষা এবং প্রয়ােজনে সংযােগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ করে থাকে সেশন লেয়ার। এটি একটি ভার্চুয়াল সার্কিট তৈরি করে যা দুই ডিভাইসের দুই প্রসেসের মধ্যে তৈরি হয়।
- একটি মেসেজ ডাটার শুরু এবং শেষ কোনটি তা চিহ্নিত করতে পারে। এর ফলে গ্রহীতা ডিভাইসের সেশন লেয়ার বুঝতে পারে পুরা মেসেজ তার কাছে পৌঁছেছে কি না। যতক্ষণ না পুরাে মেসেজ সেশন লেয়ারে পৌছাচ্ছে ততক্ষণ সে উপরের লেয়ারের সেই মেসেজ ডাটা পাঠাবে না।
- মেসেজ সিনক্রোনাইজেশনের কাজ করে থাকে সেশন লেয়ার। বেশ কিছু ডাটা প্যাকেট পাঠানাের পর উৎস ডিভাইসের সেশন লেয়ার অপেক্ষায় থাকে গ্রহীতা ডিভাইসের সেশন লেয়ারের কাছ থেকে প্রাপ্তিস্বীকার বা acknowledge মেসেজ (যাকে বলা হয় ACK) পাওয়ার জন্য। গ্রহীতা ডিভাইসের সেশন লেয়ারের কাছ থেকে ACK মেসেজ পাওয়ার পর উৎস আবার মেসেজ ডাটা পাঠাতে থাকে। এভাবে একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর মেসেজ সিনক্রোনাইজেশন চলে।
- বিভিন্ন প্রসেসের নেটওয়ার্কে কাজ করার জন্য যেসব সাপোর্ট দরকার, যেমন ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড যাচাই, রিসোর্স সিকিউরিটি যাচাই, ইত্যাদি করে থাকে সেশন লেয়ার
সেশন লেয়ারের কাজগুলিকে আমরা প্রধান তিনটি ভাগে বিভক্ত করতে পারি। এ কাজগুলি বােঝার জন্য আমরা কিছু উদাহরণের আশ্রয় নেব।
সংযােগ গড়া রক্ষা করা এবং বিচ্ছিন্ন করা
আপনি আপনার বন্ধুর সাথে কথা বলতে চান। তাহলে কী করবেন? তার টেলিফোন নম্বরে ডায়াল করবেন। এদিকে রিং হওয়ার পর তিনি ধরেন এবং হ্যালো বলেন। উত্তরে আপনিও হ্যালাে বলবেন। দুজনে হ্যালাে। বলার পরই নিশ্চিত হবেন যে আপনাদের মধ্যে সংযােগ গড়ে উঠেছে তখন আপনারা কথা বলতে পারেন। আপনি। কথা বলে যাচ্ছেন, আপনার বন্ধু শুনছে। মাঝে মাঝে আপনি হ্যালাে বলে উঠছেন। এর উদ্দেশ্য হলো সে এখনও আপনার কথা শুনতে পাচ্ছে কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। সে যখন হ্যালাে বলছে আপনি তখন নিশ্চিত হয়ে আপনার মনের কথা বলছেন। তারপর যখন কথা শেষ হবে তখন আপনি খােদা হাফেজ বলে সংযােগ বিচ্ছিন্ন। করবেন। যে রিং করে সেই সাধারণত সংযােগ বিচ্ছিন্ন করে। অপর প্রান্ত থেকে করা হলে তা হবে বেয়াদবি।। টেলিফোনে আপনি যেভাবে সংযােগ গড়ছেন সেভাবেই সংযােগ গড়ে নেটওয়ার্কের দুটো ডিভাইস। এজন্য উৎস। (OSI মডেল কী ও কেন) ডিভাইসের সেশন লেয়ার গ্রহীতা ডিভাইসের উদ্দেশ্যে একটি SYN (সিনক্রোনাইজেশন) মেসেজ পাঠায়। উত্তরে।
গ্রহীতা ডিভাইসের সেশন লেয়ার পাঠায় ACK (প্রাপ্তিস্বীকার) মেসেজ। এটি পাওয়ার পর দুজনের মাঝে একটি সেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। গ্রহীতা ডিভাইসের সেশন লেয়ার প্রেরণকারী ডিভাইসের সেশন লেয়ারের সাথে সমঝোতায় এসে দু’জনের মধ্যে ক্যুনিকেশনের নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠা করে। উভয় ডিভাইসের সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে এই নিয়ম কানুন গড়ে ওঠে। এ নিয়মকানুনের মধ্যে থাকে একসঙ্গে কী পরিমাণ ডাটা পাঠানাে হবে, কতক্ষণ পর পর পাঠানাে হবে, ইত্যাদি। একবার সেশন এবং ক্যুনিকেশনের নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দুই ডিভাইসের মধ্যে ডাটা আদানপ্রদা চলতে পারে। ডাটা পাঠানাে শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই সেই সেশন রক্ষা করা দরকার। সেশন লেয়ার এটি করে থাকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর keep-alive message পাঠিয়ে (কিছুক্ষণ পর পর হ্যালাে বলা)। দুটি ডিভাইসের মধ্যে ডাটা আদানপ্রদান শেষে অবশ্যই সেশন লেয়ারকে সেই সেশন বা সংযােগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এটি করা না হলে কোনো একটি ডিভাইস অপরপ্রান্তে ডেটা পাঠানাের বৃথা চেষ্টা করতে পারে। ব্যপারটি এমন আপনার বন্ধু ফোন। রেখে দিয়েছে কিন্তু আপনি কথা বলেই যাচ্ছেন।
ডায়ালগ কন্ট্রোল
যখন কোনাে ডিভাইস সংযােগ গড়তে চায় তখন সেশন লেয়ার জেনে নেয় কোন ডিভাইস এই কমুনিকেশনে। অংশ নেবে এবং কী পরিমাণ ডাটা একসাথে পাঠাবে, কতক্ষণ পর পর পাঠাবে। একে বলা হয় ডায়ালগ কন্ট্রোল।
(dialogue control)। তিন ধরনের ডায়ালগ কন্ট্রোল ব্যবহৃত হতে পারে:
- সিম্পলেক্স (simplex),
- হাফ ডুপ্লেক্স (half duplex) এবং
- ফুল ডুপ্লেক্স (full duplex)
সিম্প্লেক্স ডায়ালগ কন্ট্রোলে ডাটা কেবল একদিকে প্রবাহিত হতে পারে। হাফ ডুপ্লেক্স পদ্ধতিতে একদিকের ডাটা প্রবাহ শেষ হলে অন্যদিকের ডাটা প্রবাহিত হতে পারে। আর ফুল ডুপ্লেক্স ডায়ালগ কন্ট্রোলে একইসাথে উভয়দিকে ডাটা প্রবাহিত হতে পারে।
ডায়ালগ সেপারেশন।
মেসেজ পাঠানোর সাথে সাথে সেশন লেয়ার তার সাথে মার্ক যোগ করে। এর ফলে কোনাে মেসেজ ঠিকমতাে । গ্রহীতা ডিভাইসে না পৌছালে উৎস ডিভাইস বুঝতে পারে কোনখান থেকে রিট্রান্সমিট করতে হবে। মেসেজের সাথে মার্কা যোগ করা ও ট্রান্সমিট করে এই পদ্ধতিকে বলা হয় ডায়ালগ সেপারেশন (dialog separation)।
স্তর ৪: ট্রান্সপোর্ট লেয়ার।
OSI মডেলের চতুর্থ লেয়ার হলাে ট্রান্সপােট লেয়ার। এর কাজ হলাে সেশন লেয়ারের কাছ থেকে পাওয়া ডাটা। নির্ভরযােগ্যভাবে অন্য ডিভাইসে পৌঁছানো নিশ্চিত করে। এটি করার জন্য ট্রান্সপোর্ট লেয়ার সেশন লেয়ারের কাছ থেকে পাওয়া ডাটাকে ক্ষুদ্রতর অংশে বিভক্ত করে যাতে তা পরবর্তী লো এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ডেটা পৌঁছানো নিশ্চিত করার জন্য ট্রান্সপাের্ট লেয়ার দু’ধরনের ট্রান্সমিশন ব্যবহার করে:
- কানেকশন ওরিয়েন্টেড (connection oriented), এবং
- কানেকশন লেস (connectionless)।
দুটো ডিভাইসের মধ্যে কমুনিকেশন স্পিড কী হবে তাও নির্ধারণ করে এই ট্রান্সপাের্ট লেয়ার। একে বলা হয় ফ্লো। কন্ট্রোল (flow control)। যে ধরনের ট্রান্সমিশন ব্যবহার করা হােক না কেন ট্রান্সপাের্ট লেয়ার দেখবে সর্বোচ্চ। কোন সাইজের ডাটা প্যাকেট উভয় ডিভাইসই গ্রহণ করতে পারে। এর ওপর ভিত্তি করে ডাটা প্যাকেটকে ভাগ। করা হয় এবং পাঠানাে হয়। ধরা যাক কম্পিউটার পাঠাতে পারে ৫ বাইট ডাটা প্যাকেট, আর কম্পিউটার২ পারে ১০ বাইট প্যাকেট। এখন কম্পিউটার ২ যদি কম্পিউটার এর নিকট ১০ বাইটের প্যাকেট পাঠায় তাহলে কম্পিউটার১ সেটি গ্রহণ করতে পারবে না। তাই ট্রান্সপাের্ট লেয়ার ফ্লো কন্ট্রোলের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেবে যে। উভয় কম্পিউটার পরস্পরের সাথে ক্যুনিকশনে কেবল ৫ বাইট ডাটা প্যাকেট পাঠাবে।
কানেকশন ওরিয়েন্টেড ট্রান্সপোর্ট
এ ধরনের ট্রান্সপাের্ট ব্যবহার করতে হলে দুই ডিভাইসকে আগেই একটি সেশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং পুরাে ডাটা ট্রান্সমিশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেই সংযােগ অবিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। এখানে প্রতিটি প্যাকেট বা বেশ কিছু প্যাকেট পাওয়ার পর গ্রহীতা ডিভাইস উৎস ডিভাইসকে ACK মেসেজ পাঠিয়ে প্রাপ্তি স্বীকার করে। একে তাই নির্ভরযােগ্য বা রিলায়েবল ট্রান্সপাের্ট মেথড বলা হয়ে থাকে। এতে ডাটা প্যাকেট এবং ACK মেসেজ পাঠাতে হয় বলে এর গতি কিছুটা ধীর হয়ে থাকে।
কানেকশন ওরিয়েন্টেড ট্রান্সপোর্ট এর বৈশিষ্ট্য হলো:
- নির্ভরযোগ্যতা।
- ধীরগতি।
- প্যাকেট ট্রান্সমিশনের সুবিধা
কোন ডাটা প্যাকেট গ্রহীতা ডিভাইসের নিকট না পৌঁছালে সে তার জন্য ACK মেসেজ পাঠাবে না। তা দেখে উৎস ডিভাইস বুঝতে পারবে কোন প্যাকেট পুনরায় পাঠাতে হবে। প্রতিটি ডাটা প্যাকেট পাঠানাের সময় ট্রান্সপাের্ট লেয়ার তাতে সিকোয়েন্স নম্বর দিয়ে থাকে যা থেকে গ্রহীতা ডিভাইসে ট্রান্সপাের্ট লেয়ার সেসব প্যাকেটকে ক্রমানুসারে সাজিয়ে পুরাে ডাটা পেতে পারে। কানেকশন ওরিয়েন্টেড ট্রান্সপোর্ট আমরা তুলনা করতে পারি টেলিফোনের সাথে। টেলিফোনে আপনি যখন। কথা বলছেন তখন নিশ্চিত হতে পারছেন যে আপনি আসল প্রাপকের কাছেই আপনার মেসেজ পৌছাচ্ছেন। কিন্তু এর জন্য অবশ্যই আপনাকে আগে ডায়াল করে তার সাথে সংযােগ গড়তে হবে, এবং আপনার মেসেজ দেয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেই সংযােগ অবিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। এর মধ্যে আপনি যা যা বলবেন সেটি যে অপরপ্রান্তের শ্রোতা ঠিকমতাে শুনতে ও বুঝতে পারছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন তার হ্যালাে, হ্যাঁ, ইত্যাদি উত্তরে। তবে এর অসুবিধা হলে তার ওভারহেড কষ্ট বেশি। অর্থাৎ আপনার এবং অপরপ্রান্তের শ্রোতার উভয়েরই একটি টেলিফোন সেট থাকা দরকার। তাছাড়া ফোনে কথা বলার সময়ে বিলও হবে বেশি। তাই নেটওয়ার্কিং জগতে কানেকশন ওরিয়েন্টেড ট্রান্সপোর্ট বলা হয় ধীরগতির, উচ্চ ওভারহেড কস্টের, নির্ভরযোগ্য ট্রান্সপাের্ট।
কানেকশন লেস ট্রান্সপোর্ট
কানেকশনলেস ট্রান্সপাের্টে আগেই গ্রহীতা ডিভাইসের সাথে সংযােগ গড়ার দরকার পড়ে না এবং ডাটা পাঠানাের সময় ডাটা প্যাকেট গ্রহণ করে গ্রহীতা ডিভাইস কোন ACK মেসেজ পাঠিয়ে উৎসের নিকট প্রাপ্তিস্বীকার করে না। এ কারণে একে অনির্ভরযােগ্য ট্রান্সপাের্ট মেথড বলা হয়ে থাকে। এখানে গ্রহীতাকে ACK মেসেজ পাঠাতে হয় না। বলে নেটওয়ার্ক কমিউনিকেশন দ্রুতগতির হতে পারে।
কানেকশন লেস ট্রান্সপোর্ট এর বৈশিষ্ট্য হলো:
- নির্ভরযোগ্যতা নেই বললেই চলে ।
- দ্রুত পরিবহনের সুবিধা।
- হারিয়ে যাওয়া প্যাকেটের জন্য ট্রান্সমিশনের সুবিধা নেই।
কানেকশনলেস ট্রান্সপাের্টকে আমরা তুলনা করতে পারি চিঠির সাথে। আপনার বন্ধুর নিকট কোনাে মেসেজ পাঠাতে চাইলে সেটি একটি কাগজে লিখুন, চিঠিটি খামে ভরুন, এবার খামের গায়ে ঠিকানা লিখে ফেলে দিন। নিকটস্থ পোেস্ট বক্সে। তারপর ডাক বিভাগের বদৌলতে সেটি পৌঁছে যাবে বন্ধুর হাতে। বন্ধু সেই চিঠি পেল কি না, পেলে কখন পেল তা আপনি জানতে পারবেন না। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মহিমায় সেটি না পৌঁছাতেও পারে (চিঠির প্রথমে ‘আল্লাহ ভরসা’ লিখেছেন তাে?)। তবে হ্যাঁ চিঠির সুবিধাও আছে। এটি পাঠাতে হলে আগেই আপনার বন্ধুর সাথে সংযােগ গড়ে বলে দিতে হবে না যে তুমি এখন বাসায় থাকো, তােমার নামে চিঠি পাঠাচ্ছি। খরচ হবে খুবই কম, বন্ধুর কিংবা আপনার কারোরই ফোন রাখার মতাে খরচ বহন করতে হবে না।
স্তর ৩: নেটওয়ার্ক লেয়ার।
নেটওয়ার্ক লেয়ারের কাজ হলাে এড্রেসিং ও প্যাকেট ডেলিভারি। এ স্তরে ডাটা প্যাকেটকে বলা হয় ডাটাগ্রাম (datagram)। ডাটাগ্রামে যােগ হয় কোন নেটওয়ার্কে সেই প্যাকেট যাবে। নেটওয়ার্ক লেয়ারে যে এড্রেস ব্যবহৃত হয় তাকে বলে নেটওয়ার্ক এড্রেস। এটি একটি লজিক্যাল এড্রেস এবং ডিভাইসের হার্ডওয়্যার কিংবা ভৌগলিক। অবস্থানের উপর নির্ভরশীল নয়।
এর কাজ সমাধানের জন্য নেটওয়ার্ক লেয়ার যা করে থাকে তাহলে:
- ডাটা প্যাকেট নেটওয়ার্ক এড্রেস যোগ করে এনক্যাপসুলেশন এর মাধ্যমে।
- নেটওয়ার্ক এড্রেস ডিভাইসের ফিজিক্যাল এড্রেস এর সাথে ম্যাচ করে। প্রতিটি নেটওয়ার্ক এডাপ্টারের থাকে একটি বিল্ট-ইন নম্বর বা এড্রেস, যাকে বলা হয় হার্ডঅয়্যার এড্রেস বা মিডিয়া একসেস কন্ট্রোল (MAC)। নেটওয়ার্ক এড্রেসের জন্য সেই ডিভাইসের হার্ডওয়্যার এড্রেস কী তা লিপিবদ্ধ করা এই লেয়ারের কাজ।
- নেটওয়ার্ক এড্রেস যদি বর্তমান নেটওয়ার্ক এড্রেসের চেয়ে ভিন্ন হয় তাহলে সেই নেটওয়ার্কে পৌঁছার জন্য একটি উপযােগী পথ বেছে নেয়া এই লেয়ারের কাজ। এটি করা হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রটোকলের সাহায্যে, এবং এক নেটওয়ার্ক থেকে আরেক নেটওয়ার্কে ডাটা প্যাকেট পাঠানাের প্রক্রিয়াকে বলা হয় রাউটিং (routing)।
যখন একটি ডাটা প্যাকেট নেটওয়ার্ক লেয়ারে আসে তখন উৎস এবং গন্তব্যের নেটওয়ার্ক এড্রেস সেই ডাটা প্যাকেটে যোগ করা হয় এনক্যাপসুলেশন এর মাধ্যমে। উভয় এড্রেস লজিক্যাল এড্রেস। ডাটাগ্রামে প্রথমে উৎস। ডিভাইসের নেটওয়ার্ক এড্রেস যােগ করা হয়। তারপর যোগ করা হয় গন্তব্য কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক এড্রেস। এ দুই এড্রেস না থাকলে ডাটা গ্রাম গন্তব্যে কম্পিউটারে পৌঁছাবেন। গন্তব্যে কম্পিউটার আপনার লােকাল নেটওয়ার্কে থাকতে পারে অথবা দূরবর্তী কোনো নেটওয়ার্ক থাকতে পারে।। গন্তব্য কম্পিউটার যদি দূরবর্তী কোনাে নেটওয়ার্কে থাকে তাহলে ডাটা প্যাকেটকে ওই নেটওয়ার্কে পৌছে দেয়ার দায়িত্বও নেটওয়ার্ক লেয়ারের। এক নেটওয়ার্ক থেকে আরেক নেটওয়ার্কে ডাটা প্যাকেট পৌঁছানাের পদ্ধতিকে বলা হয় রাউটিং (routing)। এর জন্য অবশ্যই ডাটা প্যাকেটে সেই গন্তব্য নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক এড্রেস থাকতে হবে। এক নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে ডাটা প্যাকেটকে পৌঁছানাের জন্য নেটওয়ার্ক লেয়ার প্রথমে সেই নেটওয়ার্ক পৌঁছানোর একটি পথ খুঁজে বের করে এবং সে অনুসারে ডাটা প্যাকেটকে সুইচ করে।
কোন পথ বেছে নেয়া হবে তা নির্ভর করে বিভিন্ন মেট্রিক বা নিয়ামকের উপর। নেটওয়ার্ক লেয়ার সবসময়। সংক্ষিপ্ততম পথকে প্রাধান্য দেয়। আরও বেশ কিছু নিয়ামক এ ক্ষেত্রে কাজ করে, তবে সেসব নির্ভর করে কোন ধরনের রাউটিং প্রটোকল ব্যবহার করছেন তার উপর। রাউটিং ফাংশন যে ডিভাইস দিয়ে থাকে তাকে বলা হয় রাউটার (router)। এটি কাজ করে নেটওয়ার্ক লেয়ারে।। একাধিক নেটওয়ার্ককে যুক্ত করার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। এক নেটওয়ার্ক থেকে আরেক নেটওয়ার্কে ডাটা প্যাকেট পৌঁছাতে রাউটার ও অন্যান্য যেসব ডিভাইসের মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেসব ডিভাইসকে বলা হয়। ইন্টারমিডিয়েট সিস্টেমস। এসব ইন্টারমিডিয়েট সিস্টেম কেবল OSI মডেলের নেটওয়ার্ক লেয়ারে কাজ করে। এবং অন্যান্য লেয়ার সম্পর্কে এদের কোনাে ধারণা না থাকলেও চলে। রাউটার একটি ভিন্ন হার্ডওয়্যার হতে পারে অথবা কোনাে কম্পিউটারকে রাউটার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সিসকো সিস্টেম একটি প্রসিদ্ধ রাউটার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। আপনি এধরনের হার্ডওয়্যার রাউটার। অথবা কোনাে কম্পিউটারকে রাউটার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। উইন্ডােজ এনটি/২০০০/২০০৩/২০০৮। কিংবা লিনাক্স সার্ভারের সাথে একাধিক নেটওয়ার্ক এডাপ্টার থাকলে তাকেও রাউটার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
স্তর ২: ডাটা লিঙ্ক লেয়ার।
ডাটা লিংক লেয়ারের কাজ হলে ফিজিক্যাল লেয়ার এর মাধ্যমে এক ডিভাইস থেকে আরেক ডিভাইসে ডাটাগ্রামকে ত্রুটিমুক্ত ভাবে প্রেরণ করা। এর উপরের লেয়ার গুরু ধরে নিতে পারে যে ডাটালিঙ্ক লেয়ারের কাছ থেকে এ ডাটাগ্রাম তারা পাচ্ছে তা ত্রুটিমুক্ত।
ডাটা লিংক লেয়ারের কাজ গুলো হলো:
- দুটি ডিভাইসের মধ্যে লজিক্যাল লিঙ্ক বা ভার্চুয়াল সার্কিট তৈরি করা। এটি করা হয়ে থাকে দুটি ডিভাইসের নেটওয়ার্ক এডাপ্টার এড্রেসের ওপর ভিত্তি করে।
- ফ্রেম ফ্লো নিয়ন্ত্রণ করে।
- ফ্রেমগুলো যাতে একটির পর একটি নির্দিষ্ট ক্রমে প্রবাহিত হতে পারে তা নিয়ন্ত্রণ করে।
- প্রতিটি ফ্রেম পাওয়ার পর তার জন্য প্রাপ্তিস্বীকার মেসেজ পাঠানাে এবং কোনাে ত্রুটি দেখা দিলে উৎস ডিভাইসকে সেই ফ্রেম ট্রান্সমিট করতে বলে। একই ফ্রেম একাধিকবার পাঠানাের ত্রুটি থেকেও এ লেয়ার উদ্ধার করে।
- ডাটা ফ্রেমের শুরু ও শেষ কোথায় তা চিহ্নিত করে এনক্যাপসুলেশন এর মাধ্যমে।
- প্রাপ্ত ফ্রেম ত্রুটিমুক্ত আছে কি না তা যাচাই করে দেখে।
- ফ্রেমের গন্তব্য ঠিকানা পরীক্ষা করে দেখে এবং সিদ্ধান্ত নেয় উপরের লেয়ারে পাঠিয়ে দেবে কি না।
ডাটা লিঙ্ক লেয়ার আছে দুটি সাবলেয়ার:
- লজিক্যাল লিঙ্ক কন্ট্রোল (LLC) এবং
- মিডিয়া একসেস কন্ট্রোল (MAC)।
লজিক্যাল লিঙ্ক কন্ট্রোল বা LLC মিডিয়া একসেস মেথড ও নেটওয়ার্ক লেয়ার প্রটোকল, যেমন টিসিপি/আইপি’র অধীন ইন্টারনেট প্রটোকল- এর মাঝে একটি ইন্টারফেস হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে মিডিয়া একসেস কন্ট্রোল বা MAC সাবলেয়ার ফিজিক্যাল মিডিয়া, যেমন নেটওয়ার্ক এডাপ্টার- এর সাথে একটি সংযােগ গড়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। ডাটা লিংক লেয়ারের কাজের একটি হলো ডাটা গ্রামের সাথে ফিজিক্যাল এড্রেস বা MAC এড্রেস যােগ করা এবং ডাটাগ্রামকে ক্ষুদ্রতর ইউনিট ফ্রেমে ভাগ করা যাতে তা নেটওয়ার্ক মিডিয়ায় প্রবাহিত হতে পারে।
LLC সাবলেয়ার আবার দু’ধরনের কানেকশন সার্ভিস ব্যবহার করে যা MAC সাবলেয়ার ও উপরের লেয়ার গুলোর সাথে সেতুবন্ধন তৈরি করে। এ দু’ধরনের কানেকশন সার্ভিস হলাে:
- কানেকশন লেস বা এলএলসি টাইপ ১, এবং
- কানেকশন ওরিয়েন্টেড বা এলএলসি টাইপ- ২।
কানেকশন লেস সার্ভিস ব্যবহৃত হলে এলএলসি সালোয়ার মনে করে যে ডাটা ত্রুটিমুক্তভাবে গন্তব্যে পৌঁছেছে। অন্যদিকে কানেকশন অরিয়েন্টেড সার্ভিস ব্যবহৃত হলে LLC সাবলেয়ার যাচাই করে দেখে ডাটা ত্রুটিমুক্তভাবে পৌঁছেছে কি না। কোনো ডেটা প্যাকেট সঠিকভাবে পৌঁছালে গ্রহীতা ডিভাইস উৎসের নিকট প্রাপ্তিস্বীকার মেসেজ পাঠায়। এটি অনেক নির্ভরযোগ্য মনে হলেও এটি নেটওয়ার্কের পারফরম্যান্স ধীর করে দেয়। তাই ট্রান্সপাের্ট লেয়ারে যদি কানেকশন অরিয়েন্টেড সার্ভিস ব্যবহৃত হয় তাহলে এলএলসি টাইপ ২ ব্যবহারের দরকার পড়ে না। বাস্তবে বেশিরভাগ নেটওয়ার্ক ডিভাইসে এলএলসি টাইপ ১ ব্যবহৃত হয়। ভাটা লিংক লেয়ার MAC সাব লেয়ারে এসে ডাটা প্যাকেটের সাথে ডিভাইসের ফিজিক্যাল বা হার্ডওয়্যার এড্রেস। যোগ করা হয়। এই হার্ডওয়্যার এড্রেস বা MAC এড্রেস যোগ করার পরই সেই প্যাকেটকে বলা হয় ফ্রেম। এই। ফ্রেমে থাকে উৎস থেকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সব ধরনের এড্রেস।
নেটওয়ার্ক লেয়ারে লাজক্যাল এড্রেস এবং ডাটা লিঙ্ক লেয়ার ফিজিক্যাল এড্রেস দেয়া না হলে সেই ফ্রেম গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। কোনো ডিভাইসের ফিজিক্যাল এড্রেস বা MAC এড্রেস নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড বা LAN কার্ডের মাঝে লেখা। থাকে। এটি একটি অপরিবর্তনীয় এড্রেস এবং প্রতিটি কার্ডের জন্য সেই এড্রেস ইউনিক বা ভিন্ন হবে। প্রস্তুতকারক। প্রতিষ্ঠান এই MAC এড্রেস দেয় এবং এটিকে ইউজার পরিবর্তন করতে পারে না। এই এড্রেস দেয়া থাকে হেক্সাডেসিম্যাল হিসেবে যাতে বারােটি ডিজিট থাকে। এর মধ্যে প্রথম ছয় ডিজিট দিয়ে প্রস্তুতকারককে বােঝানাে হয়, আর শেষ ছয় ডিজিট দিয়ে সেই কার্ডের নম্বর বােঝানাে হয়। একই প্রস্তুতকারকের তৈরিকৃত সকল কার্ডের। প্রথম ছয় ডিজিট একই হবে, কিন্তু পরের ছয় ডিজিট ভিন্ন হবে। উইন্ডোজ মেশিনে আপনার নেটওয়ার্ক কার্ডের MAC এড্রেস দেখার জন্য কমান্ড প্রম্পটে ipconfig /all কমান্ড চালাতে পারেন। তাহলে চিত্র ২.৩- এর মতাে একটি ডায়ালগ বক্সে অন্যান্য তথ্যের সাথে MAC এড্রেসও দেখা | যাবে। লিনাক্স ও ইউনিক্স কম্পিউটারে ifconfig কমান্ড ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্তর ১: ফিজিক্যাল লেয়ার
OSI মডেলের সর্ব নিচের লেয়ার হলাে ফিজিক্যাল লেয়ার। এটিই আসলে একটি ডিভাইসের সাথে আরেকটি ডিভাইসের সংযোগ ঘটায়। এই লেয়ার ঠিক করে কোন পদ্ধতিতে এক ডিভাইস থেকে আরেক ডিভাইসে সিগন্যাল ট্রান্সমিট হবে, ইলেকট্রিক সিগন্যাল বা ডাটা বিট ফরম্যাট কী হবে, ইত্যাদি। ফিজিক্যাল লেয়ার এর উপরের লেয়ারের জন্য সিগন্যাল বহন করে।
এই লেয়ার নিম্নোক্ত ফিজিক্যাল উপাদানসমূহ নিয়ে ফিজিক্যাল কানেকশন গড়ে তােলে:
- টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল।
- ফাইবার অপটিক ক্যাবল
- কোএক্সিয়াল ক্যাবল
- ওয়্যারলেস মিডিয়া।
ফিজিক্যাল লেয়ার ফিজিক্যাল মিডিয়ার বৈশিষ্ট্য, ফ্রেম সিনক্রোনাইজেশন, ডাটা এনকোডিং, সিগন্যালিং প্যাটার্ন, ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে।
ডাটা এনকোডিং নির্দেশ করে:
- কোন সিগন্যাল প্যাটার্ন বাইনারি ১ ও বাইনারি ০ কে বোঝায়।
- কোন এনকোডেড বিট কখন শুরু হচ্ছে তা গ্রহীতা ডিভাইস কীভাবে বুঝবে।
- গ্রহীতা কীভাবে একটি ফ্রেমের শেষ বুঝবে।
ফিজিক্যাল লেয়ারে বিভিন্ন ফিজিক্যাল কম্পোনেন্ট, যেমন ক্যাবল, কানেক্টর, পিন, ইত্যাদির বৈশিষ্ট্য, যেমন কোন পিন দিয়ে কোন সিগন্যাল যাবে, কোন ধরনের সিগন্যালিং ব্যবহৃত হবে ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত হয়। নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড বা নেটওয়ার্ক এডাপ্টারের কাজ হলাে ডাটা বা বিটকে ট্রান্সমিশন সিগন্যালে পরিণত করা। উৎস কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক এডাপ্টার ডাটা ফ্রেমকে সিগন্যালে পরিণত করবে এবং ক্যাবল বা অন্য কোনাে মিডিয়ার মধ্য দিয়ে সেই সিগন্যাল পরিবাহিত হবে। অপরপ্রান্তে গ্রহীতা কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক কার্ড সেই সিগন্যালকে গ্রহণ করে পুনরায় ডাটা ফ্রেমে রূপান্তর করবে। নেটওয়ার্ক এডাপ্টার যে সিগন্যাল তৈরি করে ত্য বিভিন্ন রকমের হতে পারে- এনালগ বা ডিজিটাল, তবে দুটিই বাইনারি সিগন্যাল।
এই সিগন্যাল ট্রান্সমিশনের গতি কী হবে তাও নিয়ন্ত্রণ করে ফিজিক্যাল লেয়ার। একটি নেটওয়ার্ক মিডিয়ার সাথে কোনাে ডিভাইস কীভাবে সংযুক্ত হবে তাও নিয়ন্ত্রণ করে এই ফিজিক্যাল লেয়ার। যেমন কোনাে নেটওয়ার্ক এডাপ্টার যদি কোএক্সিয়াল ক্যাবলের সাথে সংযুক্ত হয় তাহলে ফিজিক্যাল লেয়ারে কাজ করে এমন ডিভাইস অবশ্যই সেই নেটওয়ার্কের জন্য ডিজাইনকৃত হতে হবে। বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক মিডিয়ার সাথে নেটওয়ার্ক এডাপ্টারকে সংযুক্ত করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইস বা কানেক্টর, যেমন RJ-45, IBM Token Ring, BNC Connector, Fibre Optic SC Connector, ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। ফিজিক্যাল লেয়ারে কাজ করে এমন অনেক ডিভাইস নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে আছে নেটওয়ার্ক এডাপ্টার, রিপিটার (repeater), হাব (hub), ইত্যাদি। এসব ডিভাইসের কোনাে কোনােটি নেটওয়ার্কের এডাপ্টারের সিগন্যালকে এমপ্লিফাই করতে পারে যাতে এটি অনেকদূর অগ্রসর হতে পারে। এক ধরনের মিডিয়া বা নেটওয়ার্ক টাইপ থেকে অন্য নেটওয়ার্ক টাইপে সেই সিগন্যাল পরিবাহিত হওয়ার দরকার হলে এসব ডিভাইস সিগন্যালকে পরিবর্তনও করতে পারে।
HOME