টোকেন রিং কীভাবে কাজ করে || How Works Token Ring
টোকেন রিং
(টোকেন রিং কীভাবে কাজ করে || How Works Token Ring) আইবিএম ১৯৭০ সালে টোকেন রিং নেটওয়ার্ক কে গড়ে তোলে একটি নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্ক হিসেবে। পরে এটি IEEE 802.5 স্ট্যান্ডার্ডে রূপ নেয়। ইথারনেট নেটওয়ার্কের চেয়ে এর গঠন ও কার্যপ্রনালী জটিল। কারণ এতে যােগ করা হয়েছে এমন এক বৈশিষ্ট্য যাতে নেটওয়ার্কে কোন ত্রুটি দেখা দিলে নিজ থেকেই সেই ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে পারে। এটি স্টার ফিজিক্যাল টপোলজি ব্যবহার করে, কিন্তু এর লজিক্যাল টপােলজি হলাে রিং আইবিএম- এর টোকেন রিং ও IEEE 802.5 স্ট্যান্ডার্ড বাস্তবে একই। কিন্তু এদের মধ্যে সামান্য পার্থক্য বিদ্যমান। আইবিএম টোকেন রিং স্পেসিফিকেশনে স্টার টপোলজি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে, যেখানে ওয়ার্কস্টেশন সমূহ যুক্ত থাকে মাল্টি স্টেশন একসেস ইউনিট (MAU) এর সাথে। অন্যদিকে ৮০২.৫ স্ট্যান্ডার্ডে কোনাে টপােলজির কথা উল্লেখ করা হয়নি, যদিও এধরনের নেটওয়ার্ক স্টার টপােলজিই ব্যবহার করে। আবার আইবিএম টোকেন রিঙে মিডিয়া হিসেবে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের কথা বলা হলেও ৮০২.৫ স্ট্যান্ডার্ডে মিডিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি। আইবিএম টোকেন রিং এবং ৮০২.৫ টোকেন রিঙের বৈশিষ্ট্যসমূহ দেখানাে হলাে সারণি ৪- এ।
টোকেন রিং নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হাব বা কনসেনট্রেটর বিভিন্ন নামে পরিচিত। এগুলি হলাে: মাল্টিস্টেশন একসেস ইউনিট (MAU বা MSAU) ও স্মার্ট মাল্টিস্টেশন একসেস ইউনিট (SMAU)। আইবিএম ৮২২৮ MSAU ব্যবহার করে আটটি ওয়ার্কস্টেশন যুক্ত করা যায়। প্যাচ ক্যাবলের মাধ্যমে অন্য MSAU এর সাথে সংযােগ গড়ার জন্য এতে রিং ইন (RI) এবং রিং আউট (RO) পাের্ট থাকে। টোকেন রিং এডাপ্টার ক্যাবল ব্যবহার করে। ওয়ার্কস্টেশনের টোকেন রিং এডাপ্টারকে MSAU এর সাথে যুক্ত করা হয়। এই ক্যাবলের এক প্রান্তে থাকে ৯ পিনযুক্ত মেল (male) কানেক্টর এবং অন্যপ্রান্তে আইবিএম ডাটা কানেক্টর। কেবল টোকেন রিং ল্যান কার্ডেই ৯ পিনযুক্ত কানেক্টর দেখা যায়। তাছাড়া অন্য সব ডিভাইসে পাওয়া যাবে আইবিএম, ডাটা কানেক্টর।(টোকেন রিং কীভাবে কাজ করে || How Works Token Ring)
টোকেন রিং কার্ড
ইথারনেট নেটওয়ার্ক এডাপ্টারে একটি বিল্ট ইন এড্রেস কার্ডের সাথে থাকে যাকে বলা হয় মিডিয়া একসেস কন্ট্রোল বা MAC। টোকেন রিং এডাপ্টারেও এরকম একটি এড্রেস সেই কার্ডের ROM বা রিড অনলি মেমরিতে থাকে। কোনাে কোনাে কার্ডে এটি সফটঅয়্যারের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যায় আবার কোনাে কার্ডে DIP সুইচ পরিবর্তন করে এই এড্রেস বদলানো যায়।
টোকেন রিং নেটওয়ার্কে একটি ওয়ার্কস্টেশনে সর্বোচ্চ দুটি নেটওয়ার্ক এডাপ্টার কার্ড থাকতে পারে। এর একটিকে প্রাইমারি এডাপ্টার এবং আরেকটিকে বিকল্প এডাপ্টার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কার্ড কনফিগার করার সময় একটি কথা মনে রাখতে হবে যে একই সেগমেন্টে প্রতিটি কার্ডে গতি একই (৪ এমবিপিএস or ১৬ এমবিপিএস) সেট করতে হবে।
টোকেন রিং ব্যবহৃত ক্যাবল
আইবিএম টোকেন রিং স্পেসিফিকেশনে তিন ধরনের ক্যাবলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা বেজব্যান্ড ট্রান্ত ব্যবহার করে। IEEE 802.5 স্পেসিফিকেশনে ক্যাবল সম্পর্কে এত কিছু বলা নেই, ডিভাইসকে যুক্ত কর পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। ক্যাবল সম্পর্কে বিশেষ বাঁধাধরা নিয়ম ৮০২.৫ স্পেসিফিকেশনে না থাকার ফলে এটি বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল ও কানেক্টর ব্যবহার করা যায়। (টোকেন রিং কীভাবে কাজ করে || How Works Token Ring)
আইবিএম স্পেসিফিকেশনে উল্লেখিত ক্যাবল টাইপ সমূহ হলো:
- টাইপ ১ ক্যাবলিং – আইবিএম টাইপ ১ ক্যাবলিং ব্যবহার করা হলে MAU থেকে ওয়ার্কস্টেশনের দূরত্ব হতে পারে ১০১ মিটার। এতে টু-পেয়ার শিল্ডেড ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল ব্যবহৃত হয়। টাইপ১ ক্যাবলিঙে টাইপ এ (Type A) কিংবা IEEE মিডিয়াম ইন্টারফেস কানেক্টর (MIC) ব্যবহৃত হয়। এতে ৪ এমবিপিএস ও ১৬ এমবিপিএস উভয় ধরনের গতি পাওয়া যেতে পারে। টাইপ ১ ক্যাবল ব্যবহার করে গড়ে ওঠা রিঙে সর্বোচ্চ ২৬০টি ওয়ার্কস্টেশন থাকতে পারে।
- টাইপ ২ ক্যাবলিং – এখানেও STP ক্যাবল ব্যবহৃত হয়। এখানে STP থেকে ওয়ার্কস্টেশনের দূরত্ব। কি হতে পারে ১০০ মিটার। ক্যাবল ও নেটওয়ার্ক এডাপ্টারের সংযােগ দেয়ার জন্য এখানে টাইপ এ অথবা মিডিয়া ইন্টারফেস কানেক্টর (MIC) ব্যবহৃত হয়। এটি ৪ ও ১৬ এমবিপিএস গতিতে কাজ করতে পারে এবং টাইপ ১ ক্যাবলের মতো একই রঙে ২৬০টি ওয়ার্কস্টেশন থাকতে পারে।
- টাইপ ৩ ক্যাবলিং – এখানে UTP ক্যাবল ব্যবহৃত হয়। ক্যাটাগরি ৩ ও ৪ ব্যবহার করা হলে এটিতে ৪ এমবিপিএস গতি পাওয়া যায়, আর ক্যাটাগরি ৪ ও ৫ ব্যবহার করে গতি হয় ১৬ এমবিপিএস। এতে RJ-11 এবং RJ45 কানেক্টর ব্যবহৃত হয়। আইবিএম স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী একটি UTP রিঙে ৭২ -টির বেশি স্টেশন থাকতে পারবে না। এতে MAU থেকে স্টেশনের দূরত্ব হতে পারে ৪৫ মিটার।
টাইপ ১ ও টাইপ ২ ক্যাবল ব্যবহার করা হলে একটি রিঙে সর্বোচ্চ ৩৩টি MAU থাকতে পারে। প্রতিটি UTP রিঙে ৯টি MAU ব্যবহার করা যায়, এবং প্রতিটি MAU -এর ৮টি পাের্ট ব্যবহার করলে একটি UTP রিঙে স্টেশনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭২টি। একটি MAU থেকে আরেক MAU -এর দূরত্ব ৪৫ মিটারের বেশি হতে পারবে। তবে এদের মাঝে রিপিটার ব্যবহার করে এই দূরত্ব বাড়ানাে যেতে পারে।। টাইপ ৩ বা UTP ক্যাবলই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এতে সমস্যা হলাে MAU থেকে MAU এবং MAU থেকে ওয়ার্কস্টেশন সংযোগের দূরত্ব খুবই কম হতে পারে। আইবিএম স্পেসিফিকেশন অনুসারে MAU থেকে স্টেশনের দূরত্ব সর্বোচ্চ ৪৫ মিটার হতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার এই দূরত্ব অতিক্রম করার সুবিধা দিতে পারে। সেজন্য কোন ধরনের MAU ব্যবহার করছেন, সেটি কত দূরত্বের কানেকশন সাপোর্ট করবে তা জানার জন্য এই প্রোডাক্ট এর ডকুমেন্টেশন দেখে নেয়া উচিত।
টোকেন রিং কীভাবে কাজ করে
টোকেন রিং নেটওয়ার্ক কম্পিউটার গুলি ফিজিক্যাল স্টার টপোলজিতে MSAU এর সাথে যুক্ত থাকলেও এটি কাজ করে রিং আকারে। এক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক একসেস মেথড হিসেবে টোকেন পাসিং ব্যবহার করা হয়। মতো একটি বিশেষ ফরম্যাট ফ্রেম, যা টোকেন নামে পরিচিত, একই দিকে ঘুরতে পারে। কোনাে নােড় এহতেশ পায় তার কাছের প্রতিবেশী নিজের কাছ থেকে। সে এই টোকেন পাওয়ার পর এটিকে পাঠায় পরবতা প্রতিরাের! নিকট। এভাবে টোকেনটি বলয়ে ঘুর্ণায়মান থাকে। কোনাে নােডের ডাটা ট্রান্সমিট করার দরকার হলে সে ওহ টোকেন তার হাতে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। টোকেন হাতে আসলে সে ওই টোকেন ফ্রেমের সাথে ভাটাকে যুক্ত করে এবং সেটি পরবর্তী নােডের নিকট পাঠায়। সেই নােড দেখে ওই প্যাকেট তার জন্য কি না। তার জন্য না হলে সে পাঠায় তার পরবর্তী নােডের নিকট। এভাবে সেটি বলয়ে ঘুরতে থাকে। যখন গন্তব্য নােডে সেই প্যাকেট পৌঁছে তখন সে ওটির একটি কপি রেখে দেয়। তার নিকট প্যাকেট পৌঁছেছে এটি যাতে প্রেরণকারী নােড বুঝতে পারে সেজন্য গ্রহণকারী নােড দুই বিটের ফ্রেম পাঠায়। সেটি প্রেরণকারী নােডের নিকট পৌঁছুলে সে বুঝতে পারে যে তার পাঠানো প্যাকেট গন্তব্যে পৌঁছেছে। দুই বিটের ফ্রেম পাঠানোর পর গ্রহণকারী নােড টোকেন ও ডাটাকে ভিন্ন করে ফেলে এবং ডাটা উপরের লেয়ারগুলোর নিকট পাঠিয়ে। টোকেন সহ ডাটাফ্রেম আবার রিঙে ঘুরে প্রেরণকারী নােডে পৌছে।
একটি নােডের নিকট কতক্ষণ পরপর টোকেন যাবে, সে কতক্ষণ ওই টোকেন নিজের দখলে রাখতে পারবে তার। সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। এর ফলে কোনাে নােড একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না। টোকেন রিং নেটওয়ার্ক তাই ইকুয়াল একসেস নেটওয়ার্ক বলে পরিচিত।
টোকেন রিজে প্রতিটি নােড একেকটি রিপিটারের কাজ করে। প্রতিটি নােড এই টোকেনফ্রেম গ্রহণের পর সেই। সিগন্যালকে এমপ্লিফাই করে পরবর্তী নােডের নিকট পাঠায়। পরবর্তী নােড আবার সেই সিগন্যালকে এমপ্লিফাই করে তার পরের নােডকে পাঠায়। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে টোকেনসহ সেই ডাটাফ্রেম আবার প্রেরণকারী নােড়ে ফিরে আসে, তবে সেখান থেকে দুই বিট হারিয়ে যায়। ডাটা গন্তব্যে পৌছেছে প্রেরণকারী নােড এটি বুঝতে পারে ডাটা ফ্রেমের এই পরিবর্তন দেখে।
আইবিএম এবং ৮০২.৩ টোকেন রিং আর্কিটেকচারে রিং ম্যানেজমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রিং ম্যানেজমেন্ট বলতে বোঝায় এমন কিছু ‘অপারেশনাল সেট যা রঙের কার্যকারিতাকে বহাল রাখে। এসব ম্যানেজমেন্ট কাজের মধ্যে রয়েছে টোকেন তৈরি ও নেটওয়ার্ক ট্রাফিক মনিটরিং, রিঙে ত্রুটি শনাক্ত করা, রিঙের এরর ডাটা কালেকশন এবং রিং রিকভারি। রিঙে সংযুক্ত যেকোন স্টেশন এই দায়িত্বগুলি পালন করতে পারে। রিঙে পরিবর্তনের সাথে সাথে যেকোন স্টেশন রিঙে এর ম্যানেজমেন্ট রােল পরিবর্তন করতে পারে। এটি ঘটে থাকে ডাইনামিক্যালি। এই ডাইনামিক রােল পরিবর্তন টোকেন রিং নেটওয়ার্ককে দেয় বিশেষ সুবিধা। এর ফলে নেটওয়ার্ক ফল্ট টলারেন্ট হয় এবং কোনাে ত্রুটি দেখা দিলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
টোকেন- রিং নেটওয়ার্কে ম্যানেজমেন্টের মূল কাজটি করে থাকে এমন একটি কম্পিউটার যাকে বলা হয় একটিভ মনিটর (active monitor)। এই একটিভ মনিটরের প্রধান কাজ হলাে নেটওয়ার্কে ডাটাপ্রবাহ ও রিঙের সুস্থতা নিশ্চিত করা। যে কম্পিউটার অধিকক্ষণ ধরে নেটওয়ার্কে আছে সেটিই একটিভ মনিটরের দায়িত্ব পালন করে। অন্য যেকোন স্টেশনই একটিভ মনিটর হতে পারে এবং কে একটিভ মনিটর হবে সেটি নির্ধারণ করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় টোকেন ক্লেইমিং (token claiming) প্রসেস। কোনাে টোকেন রিং নেটওয়ার্কে প্রথম একটি স্টেশন যােগ করা হলে সেটি এই টোকেন ক্লেইমিং প্রসেসের জন্ম দেয়, কারণ এসময় সে জানে না এই নেটওয়ার্কে একটিভ মনিটর কে? কোনাে কারণে কোনাে স্টেশন একটিভ মনিটরের সাথে যােগাযােগ করতে না পারলেও এই প্রসেসের জন্ম হতে পারে। এই প্রসেসের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় কোন স্টেশন একটিভ মনিটররূপে কাজ করবে।
একটিভ মনিটরের ম্যানেজমেন্ট কাজগুলো আমরা নিজের মতো করে বর্ণনা করতে পারি:
- প্রতিবেশিকে জানা :এর পাশের প্রতিবেশি বা নেইবার কে সেটি জানানাের প্রক্রিয়া হলাে একটিভ মনিটরের একটি প্রধান কাজ। আমরা জানি রিঙে ডাটা একইদিকে) ঘড়ির কাঁটার দিকে অথবা ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে) প্রবাহিত হয়। রিং ঠিকমতাে কাজ করার জন্য এর প্রতিটি স্টেশনকে এর উজানের প্রতিবেশিকে জানতে হবে। এখানে উজানের স্টেশন বলতে উজানে সবচেয়ে কাছের একটি R, a a hearest Active Upstream Neighbor NAUN! টোকেন রিং নেটওয়ার্কে ডাটা যেহেতু কেবল একদিকে প্রবাহিত হয় তাই কোনাে স্টেশন ডাটা প্যাকেট ঠিকমতাে রিসিভ না করতে পারলে ধরে নিতে হবে এর আগের স্টেশন তার কাছে ঠিকমতো ডাটা পাঠাচ্ছে না, ত্রুটিটি সেখানেই ঘটছে। এই ত্রুটি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ডাউনস্ট্রিম স্টেশনকে সবসময় আপস্ট্রিম স্টেশনের MAC এড্রেস জানতে হবে। কোনো ত্রুটি ঘটলে ত্রুটিযুক্ত স্টেশন এবং এর পরের স্টেশনের মধ্যবর্তী জায়গাকে বলা হয় ফল্ট ডােমেইন (fault domain)। এই ত্রুটি দূর করার জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যা বিকনিং (beaconing) নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে রিঙের অন্যসব স্টেশনকে জানিয়ে দেয়া হয় যে সেই স্টেশনটি অকেজো। তখন অন্য স্টেশনগুলি সেই ত্রুটিযুক্ত স্টেশনকে বাদ দিয়ে রিং গড়ে তােলে। কোনাে একটিভ মনিটর প্রতি ১৫ সেকেন্ড অন্তর রিঙে একটি করে একটিভ মনিটর ফ্রেম প্রেরণ করে নিজের অস্তিত্ত্ব জানান দেয়। এটি রিসিভ করার পর অন্য স্টেশনগুলো তাদের অস্তিত্ব জানান দেয় স্ট্যান্ডবাই মনিটর (stand-by monitor) মেসেজ পাঠিয়ে।
- রিং রিকভারি : রিঙে কোনাে এরর দেখা দিলে সেখানে ত্রুটি দূর করার জন্য একটিভ মনিটর বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে একটিভ মনিটরের প্রথম কাজ হবে রিংকে কার্যকর করে তােলা। এটি করা হয়ে থাকে রিং পার্জ (purge) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়া শুরুর জন্য একটিভ মনিটর প্রতিটি স্টেশনের নিকট একটি রিং পার্জ মেসেজ পাঠায়। এটি পেয়ে গেলে স্টেশনগুলি তাদের নিকট রক্ষিত প্রতিবেশি তালিকা রিসেট করে এবং নূতন ভাবে প্রতিবেশি স্টেশনগুলোকে জানার চেষ্টা করে এতে রিঙের ত্রুটিপূর্ণ স্টেশন বাদ পড়ে যায় এবং কেবল কর্মক্ষম স্টেশনগুলিকে নিয়ে নূতন রিং গড়ে ওঠে।
- টোকেন মনিটরিং : টোকেন রিং স্পেসিফিকেশনে এটি স্পষ্টভাবে বলা আছে যে কোনাে টোকেন ফ্রেম পুরাে রিং ঘুরে আসতে কখনই ১০ মিলিসেকেন্ডের বেশি সময় নিতে পারবে না। একটিভ মনিটর যদি দেখে ১০ মিলি সেকেন্ড পর টোকেন তার নিকট ফেরত আসে নি, তাহলে সে ধরে নেবে রিঙের কোথাও গন্ডগােল হয়েছে। এই গন্ডগােল থেকে রিংকে উদ্ধার করার জন্য একটিভ মনিটর রিং রিকভারি প্রক্রিয়া শুরু করবে। এছাড়া প্রতিবার যখনই কোনাে টোকেন এর নিকট আসে, একটিভ মনিটর সেটির বৈধতা নিরীক্ষা করে। যদি দেখে আসল টোকেন ফ্রেমের চেয়ে সেখানে কোনাে পরিবর্তন আছে তাহলে সে ধরে নেয় রিঙের কোথাও অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে এবং এ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য রিং পার্জিং শুরু করে।
- রিং টাইমিং নির্ধারণ : একটিভ মনিটর দু’ধরনের টাইম মেইনটেন্যান্সের কাজ করে থাকে। প্রথমত এটি রিঙের মাস্টার রেফারেন্স ক্লক সিনক্রোনাইজ করে যাতে ডাটা প্রবাহ নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয় যে কাজটি করে থাকে তাহলে কোনাে টোকেন পুরাে নেটওয়ার্ক ঘুরে প্রেরণকারীর নিকট ফেরত আসার আগেই যাতে এর সাথে যুক্ত ডাটাও গন্তব্যে পৌঁছুতে পারে সেটি নিশ্চিত করা। এটি করা হয়ে থাকে প্রতিটি টোকেনের পর একটি ডিলে টাইম (delay time) বা বিলম্বকাল নির্ধারণ করে। টোকেন প্রসেসিঙের সুবিধার্থে একটিভ মনিটর প্রতিটি টোকেনের পর ২৪ বিটের ডিলে -টাইম ব্যবহার করে রিঙে একটিভ মনিটর নির্ধারিত হলে অন্য স্টেশনগুলি স্ট্যান্ডবাই মনিটর হিসেবে কাজ করে। স্ট্যান্ডবাই মনিটরের কাজ হলাে রিঙে কোনাে এরর ঘটছে কি না এবং একটিভ মনিটর বর্তমান আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা। যেকোন সময় যদি কোনাে স্ট্যান্ডবাই মনিটর রিঙে কোনাে একটিভ মনিটর না পায় তাহলে সেটি টোকেন ক্লেইমিং প্রসেস শুরু করে। আইবিএম টোকেন রিং নেটওয়ার্কে রিং এরর মনিটর (REM) হলাে একটি বিশেষ মনিটরিং সুবিধা। নেটওয়ার্কে সব স্টেশন যেসব এরর ডিটেক্ট করছে সেগুলি সংগ্রহ করা হলাে রিং এরর মনিটরের কাজ। এর ফলে কোনাে এক স্থান থেকে পুরাে নেটওয়ার্কের ট্যাবলশু্যটিং তথ্য পাওয়া যায়। তবে এই রিং এরর মনিটর অন্যান্য স্টেশনের মতাে সাধারণ স্টেশন নয়। এতে বিশেষ মনিটরিং সফটঅয়্যার, যেমন আইবিএম ল্যান ম্যানেজার অথবা কোনাে প্রটোকল এনালাইজার ব্যবহার করা হয়।
টোকেন রিং নেটওয়ার্কে কোনাে স্টেশন যােগ করা হলে সেটি তখনই রিঙের অধীন হয় না। নূতন কোনাে স্টেশন রিডে যােগ করা হলে তখন শুরু হয় রিং ইনসার্শন (ring insertion) প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু টেস্ট সম্পন্ন হয়। রিং ইনসার্শন প্রক্রিয়াকে নিম্নের মতাে করে বর্ণনা করা যেতে পারে।
ধাপ 0: লােব টেস্ট: টোকেন রিং MAU এবং স্টেশনকে সংযােগকারী ক্যাবলকে বলা হয় লােব ক্যাবল (lobe cable)। MAU- এর সাথে যুক্ত লােব ক্যাবল প্রথম অবস্থায় একটি লুপের তৈরি করে। যখন কোনাে স্টেশনকে লােব ক্যাবলে যােগ করা হয় তখন এটি একটি লােব টেস্টিং সিগন্যাল MAU- এর নিকট পাঠায়। লুপের কারণে এটি MAU- এর নিকট থেকে সেই স্টেশনে ফেরত আসে। এতে নিশ্চিত হয় যে লােব ক্যাবলে ত্রুটি নেই। তখন স্টেশন আরেকটি সিগন্যাল পাঠায় যাকে বলা হয় রিং এটাচ সিগন্যাল (ring attach signal)। এই সিগন্যালে MAU- এ পৌছুলে মাউ পাের্ট গেট উন্মুক্ত হয়। তখন সেই স্টেশন রিঙের একটি অংশে পরিণত হয়।
ধাপ ১: একটিভ মনিটর চেক- রিঙে নূতন স্টেশন যােগ হওয়ার ফলে এতে কোনাে ডাটা আগের মতাে প্রবাহিত হতে পারে না। রিঙের এই অস্বাভাবিক আচরণে একটিভ মনিটর রিং পার্জিং প্রক্রিয়া শুরু করে। রিং পার্জিং প্রক্রিয়ায় নূতন স্টেশনের অস্তিত্ত্ব এর পাশের স্টেশনের নিকট ধরা পড়ে। কিন্তু এই স্টেশন রিঙে নূতন হওয়ায় তখনও একটিভ মনিটর কে তা জানে না। না জানার ফলে এটি টোকেন ক্লেইমিং প্রক্রিয়া শুরু করে, যার মাধ্য নূতন স্টেশন একটিভ মনিটর সম্পর্কে জানতে পারে।
ধাপ ২: ডুপ্লিকেট এড্রেস চেক – তার নিজের MAC এড্রেসের আর কোনাে স্টেশন এই রিঙে আছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য নূতন স্টেশন নিজের ঠিকানায়ই একটি মেসেজ পাঠায়। এটি পুরাে রিং ঘুরে তার নিকট আসলে তখন বিট যাচাই করে দেখে সেটি অন্য কোনাে স্টেশন গ্রহণ করেছে কি না। যদি অন্য কেউ গ্রহণ না করে থাকে তাহলে নিশ্চিত হয় যে এ এড্রেসের কোনাে স্টেশন এ রিঙে নেই। তখন সেই মেসেজকে রিং থেকে সরিয়ে নেয়। আর যদি দেখে সেই মেসেজ অন্য কোন স্টেশন গ্রহণ করেছে তাহলে বােঝে যে তার MAC এড্রেসযুক্ত স্টেশন ওই রিঙে আছে। সেক্ষেত্রে নূতন স্টেশন নিজেকে রিং থেকে সরিয়ে নেয়। ইউনিভার্সাল এড্রেসিং অর্থাৎ টোকেন রিং এডাপ্টারের ভিন্ন MAC এড্রেস ব্যবহার না করে নিজের দেয়া এড্রেস ব্যবহার করলে এধরনের ডুপ্লিকেট এড্রেস যুক্ত স্টেশন পাওয়া যেতে পারে।
ধাপ ৩: নেইবার নােটিফিকেশন- এডেস চেক করার পর নৃতন স্টেশন এর ডাউনস্ট্রিম স্টেশনের নিকট নিজের অতি জানান দিতে একটি মেসেজ পাঠায় এবং সেটিই আবার আপস্ট্রিম স্টেশনের নিকট থেকে ফেরত পাওয়ার অপেক্ষা করে। আপস্ট্রিমের নিকট থেকে সেই মেসেজ তার নিকট ফেরত এলে সে তার NAUN সম্পর্কে জানতে পারে।
ধাপ ৪: রিং ইনিশিয়ালাইজেশন প্রতিটি রিং নেটওয়ার্কের জন্য থাকে কিছু ডিফল্ট সেটিংস। রিঙে কোনাে স্টেশনকে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য সেই রিং সম্পর্কিত কিছু প্যারামিটার জানার দরকার হয়। নূতন স্টেশন রিঙে যােগ হওয়ার সময় রিং প্যারামিটার সার্ভারের নিকট একটি কনফিগারেশন মেসেজ পাঠায় যাতে থাকে নৃতন স্টেশনের MAC এড্রেস ও এর মাইক্রোকোড ভার্সন এবং এর NAUN সম্পর্কিত তথ্য। রিং প্যারামিটার সার্ভার নেটওয়ার্ক থাকলে রিং সম্পর্কিত বিভিন্ন প্যারামিটার সেই নুতন ওয়ার্কস্টেশনের নিকট পাঠায়। নূতন স্টেশন সেই প্যারামিটার সমূহ জেনে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। রিং কোনো রিং প্যারামিটার সার্ভার না থাকলে নূতন স্টেশন রিঙের ডিফল্ট প্যারামিটার ব্যবহার করে। এ ধাপেই রিঙে স্টেশন সংযােগ প্রক্রিয়া শেষ হয়। (টোকেন রিং কীভাবে কাজ করে || How Works Token Ring)
টোকেন রিং এর সুবিধা-অসুবিধা
অন্যান্য নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচারের মতােই টোকেন রিং আর্কিটেকচারে রয়েছে কিছু সুবিধা ও অসুবিধা। এর কিছু সুবিধা হলো:
- নেটওয়ার্ক বেশি লোড হলেও টোকেন রিং ঠিকভাবে কাজ করে যেতে পারে। নেটওয়ার্কে স্টেশনের সংখ্যা বেড়ে গেলে একেকটি স্টেশন বেশ কিছুক্ষণ পরপর টোকেন পায়, এতে তাদের ডাটা ট্রান্সমিশন ধীর হলেও সব কটি স্টেশনের জন্য তা সমানভাবে প্রযােজ্য হয়, ইথারনেটে যা হয় না। সেজন্য টোকেন রিং নেটওয়ার্ক অনেক সময় গ্রেসফুল ডিগ্রেডেশনের নেটওয়ার্কও বলা হয়ে থাকে।
- টোকেন রিং এর বিল্ট ইন ডায়াগনস্টিক ও রিকভারি মেকানিজম, যেমন বিকনিং (beaconing) ও অটোরি কনফিগারেশন, এই নেটওয়ার্ক বেশি নির্ভরযোগ্য করে তুলেছে।
- এই নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার আইবিএম -এর তৈরি বলে এটি সহজেই আইবিএম মেইনফ্রেম।
- কম্পিউটারের সাথে যুক্ত হতে পারে।
- CSMA/CD একসেস মেথডের পরিবর্তে টোকেন পাসিং একসেস মেথড ব্যবহার করায় এখানে। কলিশন ঘটার সম্ভাবনা থাকে না। কলিশন না থাকায় এ নেটওয়ার্ক পুরাে সময় জুড়ে পুরাে ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করতে পারে।
- ইথারনেট নেটওয়ার্ক ব্যান্ডউইথ গড়পড়তা ৩০ %ব্যবহার করা হয়, কিন্তু টোকেন রিং নেটওয়ার্কে ব্যান্ডউইডথের গড়পড়তা ব্যবহার ৪০%
টোকেন রিং নেটওয়ার্কের অসুবিধা হলে:
- ইথারনেট অথবা আর্কনেটের চেয়ে টোকেন রিং কার্ড ও ইকুইপমেন্টসমূহ বেশ ব্যয়বহুল।
- টোকেন -রিং নেটওয়ার্ক ট্রাবলশুটিং বেশ কঠিন এবং এর জন্য অভিজ্ঞ লােক প্রয়ােজন।